মুকুট: এত দিন প্রচারে দেখা যেত এই হাসিমুখ। ফাইল চিত্র
একে তো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতেই অনেকগুলো দিন নষ্ট করেছে বিজেপি। শেষমেশ যা-ও বা মুকুটমণি অধিকারীর নাম ঘোষণা হয়েছিল, তিনি আদৌ ভোটে লড়তে পারবেন কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় ফের রানাঘাট কেন্দ্রে ঝটকা খেল তাদের প্রচার। নেতারা পড়েছেন বিড়ম্বনায়। এ বার কর্মী-সমর্থক তো বটেই, সাধারণ মানুষের হাজার প্রশ্নের জবাব দিতে হবে তাঁদের।
রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে বিজেপি তাঁর নাম ঘোষণা করার পরেই ইস্তফা দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন বাদকুল্লা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক মণিমুকুট। গত ২ এপ্রিল চিঠি দিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়ে দিয়েছে, ন্যূনতম পাঁচ বছর চাকরির সময়সীমা উত্তীর্ণ না হওয়ায় তাঁর ইস্তফা মঞ্জুর করা যাবে না। যে জট ছাড়াতে না পারলে তিনি মনোনয়নও জমা দিতে পারবেন না, কেননা সরকারি চাকরিতে ইস্তফা না দিয়ে ভোটে লড়া যায় না।
এই পরিস্থিতিতে আইনি লড়াইয়ে যাওয়া বা প্রার্থী বদল করা ছাড়া রাস্তা খোলা থাকল না বলে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন। কিন্তু যে সময়ে প্রচার ক্রমশ তুঙ্গে ওঠার কথা, সেই সময়ে এই ধাক্কা যে মোটেই সুবিধের নয়, তা কেউ অস্বীকার করতে পারছেন না। কেননা কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট কেন্দ্রে মনোনয়নপত্র জমার কাজ ২ এপ্রিল থেকেই শুরু হয়েছে, মাঝে রবিবার বাদ দিয়ে চলবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। ফলে হাতে সময় বিশেষ নেই।
রানাঘাট কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণার ক্ষেত্রে গোড়া থেকেই পিছিয়ে ছিল বিজেপি। তৃণমূল এবং সিপিএম প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারে নেমে পড়লেও অনেক জায়গাতেই প্রার্থীর নাম বাদ রেখে দেওয়াল লেখার কাজ শুরু করতে হয়েছিল বিজেপি কর্মীদের। প্রার্থীর জন্য হা-পিত্যেশ করতে করতে হতাশ হয়ে পড়ছিলেন অনেকে। শেষে গত ২৬ মার্চ মুকুটমণির নাম ঘোষণা করা হয়। এই কেন্দ্রে বিপুল পরিমাণ মতুয়া ভোটের কথা মাথায় রেখেই মতুয়া প্রার্থী হিসেবে তাঁকে বাছা হয়েছিল। ২৮ মার্চ তিনি হাঁসখালি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে পদত্যাগপত্র দেন। তাঁকে নিয়ে তড়িঘ়ড়ি প্রচারে ঝাঁপান দলের নেতাকর্মীরাও।
ইতিমধ্যেই মুকুটমণিকে নিয়ে শান্তিপুর, চাকদহ, রানাঘাট ১ ও ২, হাঁসখালি, নবদ্বীপ ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় কর্মিসভা ও পদযাত্রা করা হয়েছে। যদিও তাঁর ইস্তফা শেষমেশ গৃহীত হবে কি না তা নিয়ে সংশয় ছিলই। কেননা আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা চিকিৎসক জয়ন্ত রায়ের পদত্যাগ গৃহীত হলেও বীরভূম কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী ও চিকিৎসক রেজাউল করিমের ইস্তফা মঞ্জুর হয়নি। ফলে মুকুটমণির বেলায় কী হবে, তা নিয়ে সংশয় ছিলই। যদিও রেজাউলের মতো তিনি আদ্যন্ত সরকার-বিরোধী বলে পরিচিত না-হওয়ায়, বস্তুত তাঁর কোনও রকম রাজনৈতিক অতীতই না থাকায় বাধা আসবে না বলে আশা করছিলেন জেলা বিজেপির নেতারা। কিন্তু তাতে আপাতত জল পড়েছে।
গত দু’তিন দিন ধরেই প্রচারে দেখা যায়নি মুকুটমণিকে। বুধবার মোদীর ব্রিগেড ছিল। মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার ‘ব্যক্তিগত কাজে’ তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেনয়। ফলে প্রচার এমনিতেই ঝিমিয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতি হল কেন? মুকুটমণির দাবি, “এ রকম কোনও বন্ড সরকারের সঙ্গে আমার ছিল না। ওঁরা একটা অ্যামেন্ডমেন্ট দেখাচ্ছেন, যেটা কবে আনা হয়েছে আমার জানা নেই। দল দেখছে। আশা করছি, ঠিক হয়ে যাবে।’’
রানাঘাটের সিপিএম প্রার্থী রমা বিশ্বাস বলছেন, “ওরা তো সব জেনে-শুনেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। ফাটকা খেলেছে যাতে মানুষের মধ্যে আলোড়ন তোলা যায়। ওদের নিশ্চয়ই অন্য প্রার্থী ঠিক করা আছে। এখনও তো দিন আছে। হয়তো অন্য কোনও প্রার্থী দেবে।” আর জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর সিংহ বলেন, “তৃণমূল আগে থেকেই এই কেন্দ্রে অ্যাডভান্টেজের জায়গায় আছে। এটা নিয়ে তাই আলাদা করে কিছু ভাবছি না।”
বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকার পাল্টা বলেন, “তৃণমূল ভয় পেয়েছে। তাই আমাদের প্রার্থীর ইস্তফা আটকে দেওয়া হয়েছে।” মুকুটমণিও বলছেন, ‘‘অনেককেই ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আমি যেহেতু রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছি তাই রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এ সব করা হচ্ছে।” এই পরিস্থিতিতে কি আর বিজেপি কর্মীরা ভোটের জন্য ঝাঁপাতে পারবেন? জগন্নাথের দাবি, “কর্মীরা প্রচারে আছেন। দলীয় নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।”