ভোটের বাকি আর দু’দিন। শেষবেলার প্রচার জমে উঠল দুই জেলাতেই। বুধবার বিকেলে নদিয়ায় রোড শো করলেন অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিকে পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদে নিজের গড় সামলাতে কান্দি, বেলডাঙায় একাধিক সভা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
গনগনে রোদে বিকেল সাড়ে তিনটে থেকেই ভিড়টা বাড়তে শুরু করেছিল। গৌরাঙ্গ সেতু পেরিয়ে নবদ্বীপ শহরে ঢোকার মুখেই রেলওয়ে রিক্রিয়েশন ক্লাবের সবুজ মাঠ। সেখানেই উৎসুক জনতা অপেক্ষা করছিল তাঁর জন্য। বুধবার বিকেলে অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় নবদ্বীপে বিজেপির প্রার্থীদের হয়ে রোড-শো করতে এসেছিলেন। বিজেপির তরফে তেমন ভাবে প্রচার ছিল না। তবুও খবরটা ঠিক ছড়িয়ে পড়েছিল। এবং রোদ উপেক্ষা করে অভিনেত্রীকে দেখতে ভিড়টাও নেহাত মন্দ হয়নি। যদিও ওই ভিড়ে মহিলাদের সংখ্যাই ছিল বেশি। কথা ছিল রোড-শো শুরু হবে তিনটের সময়। কিন্তু সাড়ে তিনটে, পৌনে চারটে, চারটে—ঘড়ির কাঁটা যত এগিয়েছে, পাল্লা দিয়ে টেনশন বেড়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতাদের। আসলে ঠিক আগের দিনই নবদ্বীপে তৃণমূলের এক নির্বাচনী সভায় পূর্ব ঘোষণা সত্ত্বেও আসতে পারেননি তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফলে নেতাদের ঘন ঘন ফোন চালাচালি দেখে একজন তো বলেই ফেললেন, ‘‘কী রে, আজও পার্থ সিনড্রোম নাকি?”
শেষ পর্যন্ত লকেটের দুধসাদা গাড়িটি যখন মাঠে ঢুকল, তখন ঘড়িতে পাঁচটা বাজতে সামান্যই বাকি। দীর্ঘ অপেক্ষার যাবতীয় বিরক্তি সব বিরক্তি উধাও। উৎসাহীদের ভিড়ে কার্যত ঘেরাও হয়ে লকেট গাড়ি থেকে নামতেই পারলেন না বেশ কিছুক্ষণ। প্রায় মিনিট পনেরো পরে বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা কোন ক্রমে জায়গা করে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে খোলা গাড়িতে তুলে দেন। পরনে লাল-গোলাপির মিশেল পাড়ের তসর রঙা শাড়ি। চোখে রোদচশমা। নমস্কার প্রতি-নমস্কারের ফাঁকে এলাকার নেতাদের সঙ্গে অল্প কিছু কথা সেরেই গাড়ি এগিয়ে চলল শহরের ভিতরের দিকে। রাস্তার দু’পাশের ভিড় থেকে ছবি তোলা ও অভিনেত্রীর সঙ্গে হাত মেলানোর ধুম দেখা গেল গোটা রোড- শো ঘিরেই। এ দিন নবদ্বীপ ছাড়াও লকেট বীরনগরে পথসভা ও তাহেরপুরে রোড শো করেছেন।
এ দিন লকেট বলেন, “কলকাতার পুরভোট দেখে যা বুঝেছি, ২৫ তারিখের ভোটে আরও বড় সন্ত্রাস করবে শাসক দল। তবে মানুষকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।” তিনি বলেন, ‘‘মনে রাখবেন যারা ভয় দেখায় তাঁরা নিজেরাই ভীতু। ওঁদের ভয় না পেয়ে সবাই একজোট হয়ে তাদের সামনে রুখে দাঁড়ান।’’ প্রতিটি প্রচারসভায় লকেট মনে করিয়ে দিয়েছেন রানাঘাট কাণ্ডের কথা। তিনি বলেন, “এ রাজ্যে কেউ নিরাপদ নয়। ছেলেমেয়ে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত বাবা মা নিশ্চিন্তে থাকতে পারে না। এই সরকার অপদার্থ সরকার।”
অন্য দিকে পুরভোটের প্রাক্কালে মুর্শিদাবাদের নানা পুর-এলাকা চষে বেড়ালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। একাধিক সভায় নানা বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমালোচনার সঙ্গে তুলোধনা করলেন সিপিএমকেও। বুধবার বিকেলে বেলডাঙায় দুটি জনসভা করেন অধীর। প্রথমটি বেলডাঙা জনকল্যাণ ময়দানে, দ্বিতীয়টি তরুণ সঙ্ঘ ময়দান সংলগ্ন মাঠে। অধীরবাবু তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, ‘‘বেলডাঙা পুরসভার ২৯ বছর বামেরা ক্ষমতায় ছিল। আমরা ৫ বছরে তার চেয়ে বেশি উন্নতি করেছি। এ বার আপনারা সিদ্ধান্ত নিন কাদের ভোট দেবেন।’’
অন্য দিকে, সন্ধ্যায় কান্দিতে দু’টি সভা করেন তিনি। প্রথমটি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রসরা এলাকায় পরে থানার সামনে। পুলিশের সাহায্যে তৃণমূল কান্দির পুরভোটে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে বলে অভিযোগ অধীরের। এই নিয়ে কান্দিতে মোটটি আটটি সভা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।