প্রতীকী ছবি
আনলক পর্বে রাজ্য জুড়ে নতুন করে সাপ্তাহিক লকডাউন শুরু হলেও, তার প্রভাব কখনও কখনও মিশ্র কখনও মন্দ। জুলাই মাস থেকে নবান্নের অনুশাসনে, সপ্তাহে দু’দিন করে এই লকডাউনে জেলার অধিকাংশ জায়গায় পূর্ণ সাড়া মিলছে না কেন, তা নিয়ে চর্চাও কম হচ্ছে না। বুধবার যেমন, বহরমপুর থেকে জঙ্গিপুর সর্বত্র পুলিশের কঠোর টহলদারি থাকলেও থেকে থেকেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন মানুষজন। তা যে নিছক রামজন্মভূমির শিললান্যাসের উৎসবে রামভক্তদের ‘বিদ্রোহ’ তা নয়, পথে বের হওয়া বহু মানুষকেই পুলিশি জেরায় বলতে শোনা গিয়েছে— ‘পাঁচ বার দিন বদল করলে লকডাউনের দিন অত মনে থাকে না!’ অগস্ট মাসে লকডাউনের দিন নিয়ে নবান্নের ঘনঘন পরিবর্তন যে সত্যিই সাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে তা বলা বাহুল্য। জেলা প্রশাসনের এক করর্তাও স্বীকার করছেন, ‘‘চার বার দিন বদল হল। দশ দিনের বদলে লকডাউনের দিন কমে এল ৯, ৮ এখন ৭ দিনে। আমাদেরই অসুবিধা হচ্ছে, সাধরণের তো হবেই!’’ তার উপর, পড়শি নদিয়া এবং বীরভূমের মতো জেলায় লকডাউন শুধু সাপ্তাহিক নয়, বেশ কিছু জায়গায় টানা, কোথাও পাঁচ কোথাও বা সাত দিন। সেই সব জেলার সঙ্গে গাঁ-গঞ্জের মানুষের চলাচল অনর্গল। ফলে ‘বিভ্রান্ত’ হওয়ার কারণ যে অমূলক নয় তা মনে করছেন জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্তাই।
এ দিন তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিজেপি’র নিয়মভাঙা। অযোধ্যায় রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন বলে মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি কর্মীরাও নির্বিকার মুখে খোল-করতাল নিয়ে এ দিন সকাল থেকেই পথে নেমে পড়েছিলেন। লকডাউনের তোয়াক্কা না করলেও যে তেমন কিছু হয় না, পুলিশের ভূমিকা দেখে এ দিন তাই মনে হয়েছে। গোরাবাজার থেকে বহরমপুরের সৈয়দাবাদ,শহরের ২৮টি ওয়ার্ডেই শিলান্যাসের ‘খুশিতে’ বিলি করা হয়েছে লাড্ডু। পুলিশি টহল থাকলেও তা কেন চোখে পড়ল না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা তৃণমূল এবং কংগ্রেসের একাধিক নেতাও।
জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার লকডাউনের ছবিও প্রায় এক। সেখানেও রামভক্তদের নিয়ভাঙা প্রায় দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছে পুলিশ বলে অভিযোগ। জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ, সুতি ১ এলাকার প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিজেপির সদস্যরা লাড্ডু বিলি করেছে পুলিশের সামনেই। বিকেল পর্যন্ত আটকের কোনও খবর নেই।
তবে, শহরের বাজার এলাকায় বিকিকিনি ছিল না জেলার প্রায় কোথাওই। তবে ছবিটা প্রায় উল্টো গ্রামীণ জনপদে। লকডাউনের খুব একটা প্রভাব ছিল না ডোমকলে। চলেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, অধিকাংশ দোকানপাটও ছিল খোলা। জমিয়ে চলেছে চায়ের দোকানে আডডা, রাস্তা ঘাটে চলেছে বেশ কিছু গাড়িঘোড়াও। গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, লকডাউনের নামে তাঁদের রুজি-রুটি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ জায়গাতেই পুলিশের সামনে নিয়ম করে দোকান বন্ধ করা হলেও উর্দিধারীরা মুখ ফেরাতেই ফের স্বাভাবিক দিনযাপন। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, “পুলিশি টহল ছিল, ছিল নাকা চেকিংও। সারা দিনে জেলায় ২১০জনকে আটক করা হয়েছে।”