রেল হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে পোস্টার, নদিয়ার নবদ্বীপ স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র photopranab@gmail.com
খোলনলচে বদলের অপেক্ষায় দিন গুনছে নবদ্বীপ ধাম স্টেশন। ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পে আমূল বদলে যেতে চলেছে নবদ্বীপ স্টেশনের বর্তমান চেহারা। বহু কোটি টাকার প্রকল্প রূপায়ণের জন্য উচ্ছেদের আশঙ্কায় দিন গুনছেন নবদ্বীপ স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চলের কয়েকশো মানুষ। তাঁদের মধ্যে যেমন আছেন হকার, দোকানদার, তেমনই আছেন রেললাইনের ধার বরাবর গড়ে ওঠা ঝুপড়ির বাসিন্দারাও।
নবদ্বীপ শহরের দক্ষিণ সীমানা বরাবর চলে গিয়েছে পূর্ব রেলের ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখার রেল লাইন। নবদ্বীপ পুর এলাকার ব্যাদড়া পাড়া থেকে রেলগেট পর্যন্ত প্রায় সোয়া কিলোমিটারের বেশি জায়গা জুড়ে রয়েছে স্টেশন রোড। নবদ্বীপের অন্যতম সেই প্রবেশ রাস্তা দু’ধারে গড়ে উঠছে অসংখ্য ছোটবড় দোকান। সম্প্রতি রেলের তরফে ছাপানো বিজ্ঞপ্তি ওই সব দোকানে সেঁটে দেওয়া হয়েছে। যাতে ওই ‘অবৈধ দোকান ঘর’ পয়লা মের মধ্যে সরিয়ে নিয়ে বলা হয়েছে। অন্যথায় রেল আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর থেকেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। উচ্ছেদের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে নবদ্বীপ শহর তৃণমূল শ্রমিক কংগ্রেস এবং সিটু। দোকানদার, হকার এবং ঝুপড়িবাসীদের পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসাবে তৃণমূলের তরফে একটি বড়মাপের বিক্ষোভ সমাবেশ ইতিমধ্যে স্টেশন চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বামেদের তরফে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষরিত আবেদন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
সম্প্রতি পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের ডিআরএম মনীশ জৈন নবদ্বীপ ধাম স্টেশন পরিদর্শন করেন। উচ্ছেদ প্রসঙ্গে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “অমৃত ভারত প্রকল্পের কাজের জন্য রেল তাঁর নিজের জায়গা ব্যবহার করবে। রেলের জমি সকলের। এটা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় যে তিনি সেখানে ব্যবসা করবেন বা বাস করবেন। সকলের উন্নয়নের জন্য সে জমি দখলমুক্ত করে ব্যবহার করবে রেল।” এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির নবদ্বীপ শাখার সভাপতি ভানু সাহা বলেন, ‘‘আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে নই। তবে অমৃত ভারতের নামে রেল যদি ব্যাদড়া পাড়া গুমটি থেকে রেলগেট পর্যন্ত সব সাফ করতে চায় তা হলে তো গণ আন্দোলন হতেই পারে।”
অন্য দিকে সিটুর নবদ্বীপ শাখা সম্পাদক সৌমেন অধিকারী বলেন, “রেলের উপর নির্ভর করে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের স্বার্থরক্ষা আমাদের মূল লক্ষ্য। উন্নয়নের নামে গরিব মানুষের ভাত মারার কাজ দীর্ঘ দিন ধরেই রেল করছে। স্টেশন তুলে দেওয়া হচ্ছে বৃহৎ পুঁজির হাতে। এ বার স্টেশন রোডে উচ্ছেদ করতে হলে আগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় জোরালো প্রতিবাদ,আন্দোলন হবে।”
নবদ্বীপ রেলগেটে চল্লিশ বছর ধরে দোকান চালাচ্ছেন মধুসূদন দে। তিনি বলেন, “প্রায় দু’দশক পর ফের উচ্ছেদের ভয় পাচ্ছি। ঠিক বুঝতে পারছি না রেল কী করতে চাইছে। ওই নোটিস দিয়ে যাওয়ার পর রেল এক দম চুপ করে আছে। জানি না সামনে কী অপেক্ষা করছে।”