‘জাগো বাংলা’র স্টলে গ্রন্থাগারিকেরা

ওঁরা সরকারি কর্মচারী। ওঁদের কাজ গ্রন্থাগার সামলানো, বইমেলায় খুঁজে-পেতে নিজের গ্রন্থাগারের জন্য বই কিনে আনা। বা, দরকার পড়লে মেলায় স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করা।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১০
Share:

দোকানি যখন গ্রন্থাগারিকেরা। —নিজস্ব চিত্র

ওঁরা সরকারি কর্মচারী। ওঁদের কাজ গ্রন্থাগার সামলানো, বইমেলায় খুঁজে-পেতে নিজের গ্রন্থাগারের জন্য বই কিনে আনা। বা, দরকার পড়লে মেলায় স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করা।

Advertisement

বহরমপুর বইমেলায় সেই সরকারি গ্রন্থাগারিকদেরই অনেককে দেখা গেল শাসকদলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র স্টল সামলাতে, বই বিক্রি করতে। যে বইমেলায় ‘প্রদেশ কংগ্রেস বার্তা’ স্টল না পাওয়ায় ইতিমধ্যেই পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে, সেখানে এই ঘটনা আরও বড় প্রশ্ন তুলে দিল।

সোমবার দুপুরে মুর্শিদাবাদের ওই বইমেলায় গিয়ে দেখা যায়, ‘জাগো বাংলা’র স্টলে ব্যস্ত নবগ্রামের সুকি বালার্ক সঙ্ঘের গ্রন্থাগারিক বিশ্বজিৎ সাহা। ব্যাপার কী? ‘‘প্রথম দিন থেকেই এই স্টলটা চালাচ্ছি দাদা’’— নির্বিকার মুখে বলেন তিনি। সরকারি কাজে এসে দলের স্টলে কাজ করা যায়? প্রশ্ন শুনে রসিদ কাটা থামিয়ে চুপ করে তাকিয়ে থাকেন সৈয়দাবাদ টাউন গ্রন্থাগারিক আশিস রায়েরা।

Advertisement

ডোমকলের ফরিদপুর গ্রামের গ্রন্থাগারিক রথীন মণ্ডল অবশ্য ক্রেতাদের বই এগিয়ে দিতে-দিতেই গলা খাঁকরে জানিয়ে দেন, ‘‘ফারুকদা আমাদের বই বিক্রি করতে বলেছেন। ওঁকে জিগ্যেস করুন।’’ ‘ফারুকদা’ মানে ফারুক হোসেন তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত ‘পশ্চিমবঙ্গ সাধারণের গ্রন্থাগার ও কর্মী কল্যাণ সমিতি’র জেলা সভাপতি। অনুগত গ্রন্থাগারিকদের স্টলে বসিয়ে বই বিক্রি করানোর কথা প্রথমে তিনি স্বীকার করতে চাননি। তার পরেই তাঁর পাল্টা চ্যালেঞ্জ, ‘‘সরকারি কাজ করে বলে কি রাজনীতি করতে পারবে না?’’

তৃণমূল প্রভাবিত ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন’-এর মেন্টর গ্রুপের আহ্বায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যেহেতু সরকারি কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার পূর্ণ অধিকার নেই, তাঁরা প্রত্যক্ষ ভাবে রাজনীতি করতে পারেন না।’’ যদিও এই গ্রন্থাগারিকেরা কেউই সেই অর্থে ‘সরকারি কর্মচারী’ নন। রাজ্যের প্রাক্তন গ্রন্থাগার অধিকর্তা কল্লোল মুখোপাধ্যায় জানান, হাতে-গোনা কয়েকটি গ্রন্থাগার সরকারি। বাকি সব সরকার-পোষিত বা বেসরকারি।

যে সব গ্রন্থাগারিককে এ দিন স্টলে দেখা গিয়েছে, তাঁদের কারও গ্রন্থাগারই ‘সরকারি’ নয়, বরং বেশির ভাগই সরকার-পোষিত। ফলে তাঁরা সরকারি ‘সার্ভিস রুল’-এর আওতায় পড়েন না। কিন্তু, তা বলে সরকারি কাজের দায়িত্বে থেকে কি কেউ রাজনৈতিক দলের স্টলে কাজ করতে পারেন? মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক তথা বইমেলা কমিটির সচিব প্রবোধ মাহাতো বলেন, ‘‘গ্রন্থগারের বই কেনা, আলোচনাচক্র বা আয়োজনে সহযোগিতা করার জন্য গ্রন্থাগারিকরা বইমেলায় থাকতে পারেন। কিন্তু কোনও স্টলে বই বিক্রি করা তাঁদের কাজ নয়।’’

ফারুক অবশ্য নিয়মকানুনের কথা কানে তুলতে নারাজ। উল্টে এ বার তিনি গোরাবাজার বঙ্কিম লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক সুখেন ভট্টকে ডেকে স্টলে বসিয়ে আস্ফালন করেন, ‘‘দেখি, কে কী করে!’’ তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উজ্জ্বল মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘ওখানে কী হয়েছে, জানি না। কিন্তু দলীয় স্টলে দলের লোকেদেরই থাকা উচিত।’’ জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও শুধু বলেন, ‘‘সরকারি কর্মীরা বইমেলায় কোনও স্টলে বসে কাজ করছেন, এমন খবর আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement