চলছে পাতিলেবুর চাষ। — নিজস্ব চিত্র
ভাতের পাতে একটুকরো লেবু পড়লে হাসিটা চওড়া হয় না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া ভার। বাঙালির রন্ধনশালায় পাকাপাকি জায়গা করে নেওয়া সেই লেবু এ বার দিশা দেখাচ্ছে বিকল্প চাষের।
সারা দেশে পাতিলেবুর ব্যাপক চাহিদা। সে পাঁচতারা হোটল হোক বা রাস্তার ধারে সস্তা ভাতের হোটেল সবখানেই পাতিরলেবুর সমান আদর। সেই চাহিদার কথায় মাথায় রেখে বিকল্প চাষ হিসেবে জমিতে পাতিলেবু লাগিয়েছেন মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বর্ধমানের চাষিরা। আর তা করে ঘরে মোটা অঙ্কের টাকা তুলছেন নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগণার চাষিরা।
গত কয়েক বছরে নানা কারণে কখনও ধান কখনও পাট চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। আলুর মতো অর্থকরী ফসল চাষ করেও লোকসানের মুখে দেখতে হয়েছে তাঁদের। তাই চেনা চাষ-আবাদ ছেড়ে বিকল্প চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। আর সেখানই কেরামতি দেখাচ্ছে পাতিলেবু। ব্যয়বহুল চাষের বদলে সামান্য ব্যয় এবং স্বল্প পরিশ্রমেই মিলছে প্রচুর পাতিলেবু। তাই চাষিদের মধ্যে হু হু করে এই চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে।
নদিয়ার চাপরা, করিমপুর, শ্যামনগর, ধুবুলিয়া, বেথুয়াডহরি, পলাশি কিম্বা নবদ্বীপ লাগোয়া পূর্বস্থলী ১ ও ২ নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পাতিলেবুর চাষ হচ্ছে। চাষিদের কথায় সামান্য অর্থ আর স্বল্প শ্রমে সারা বছর দু’তিনবার পর্যন্ত লাভের কড়ি ঘরে তুলে দিচ্ছে ওই পাতিলেবু।
উঁচু এবং জল দাঁড়ায় না এমন জমি হলেই পাতিলেবুর গাছ বসানো যায়। সামান্য জলসেচ এবং সারই যথেষ্ট। খরচ বলতে একবারই পাতিলেবুর চারা বসানোর সময়। সেও বিরাট কিছু নয়। তারপর সাত থেকে আট বছর ফলন। সব মিলিয়ে বিকল্প ফসল হিসাবে চাষিদের কাছে বছর পাঁচেকের মধ্যে পাতিলেবু দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বলছিলেন বর্ধমানের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ। তিনি জানান, এক সময়ে ভাতের পাতে একটুকরো লেবু স্বাদবর্ধক হিসাবে জায়গা পেত। গৃহস্থ বাড়ির ছড়ানো উঠোনে একটা পাতিলেবু গাছ থাকবেই। কিন্তু এখন পাতিলেবুর ব্যবহার স্বাস্থ্য থেকে ওষুধ নানাবিধ। ক্রমশ এ রাজ্যে বাড়ছে লেবুর চাহিদা। সারা বছর জুড়ে ভিন রাজ্যে বিপুল পরিমাণ পাতিলেবু যাচ্ছে। ফলে চাষিদের কাছে উপার্জনের অন্যতম পথ হয়ে উঠছে পাতিলেবু।
নদিয়ার বড় আন্দুলিয়ার কৃষক রবীন্দ্রনাথ দত্ত যেমন বলেন “সেচের জন্য জল, সার, লেবার কিছুই তেমন লাগে না। রোগপোকা গাছের ক্ষতি করতে পারে না।’’ তিনি জানান, সাধারণ দোঁয়াশ বা এঁটেল যে কোনও জমিতেই পাতিলেবু গাছ জন্মায়। ফলে চাষিদের কাছে ক্রমশ জনপ্রিয় হছে। সবচেয়ে বড় কথা, সারা বছর লেবুর চাহিদা। খুব কম করে ২৫০ টাকা প্রতি একশ লেবু, আর ভাল হলে ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত দাম মেলে পাতিলেবুর।
অন্য দিকে, বর্ধমানের শ্রীরামপুরের চাষি মন্টু মণ্ডল জানান, অল্প খরচে দীর্ঘ মেয়াদি চাষ হল এই পাতিলেবু। একটা গাছের পিছনে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা খরচ করলে বছরে ১০০০-১২০০ টাকা লাভ করছেন চাষি। এক বিঘা জমিতে লেবু চাষে ছ’হাজার টাকা খরচ করে বছরে কমবেশি চল্লিশ হাজার টাকা আয় করতে পারেন একজন চাষি। সুতরাং যাঁদের সুযোগ আছে তাঁরা পাতিলেবু চাষে ঝুঁকছেন।