বেতবেড়িয়ায় সিপিএমের মিছিল। — নিজস্ব চিত্র
শেষ কবে লাল ঝাণ্ডা দেখেছিল বেতবেড়িয়া—মনেই পড়ছে না।
চাপড়ার হৃদয়পুর পঞ্চায়েতের আটপৌরে গ্রামটায় পার্টির দাপটের দিনগুলো খুব মনে আছে নিত্যপ্রিয়র। বেতবেড়িয়ার প্রৌঢ় বলবলছেন, ‘‘সে এক দিন গিয়েছে। গ্রামে কেউ নতুন ছাগল কিনলেও সিপিএমের নেতাদের কানে ঠিক খবর চলে যেত।’’ পালাবদলের পরে ক্রমেই হারিয়ে য়াওয়া সেই সিপিএম আবার ফিরছে। মাঝের পাঁচ বছরে নদিয়ার ওই প্রান্তিক গ্রাম দেখেছে অন্য এক শক্তি, তৃণমূলের দাপট। কেমন তা? গ্রামের যুবক গমেশ বলছেন, ‘‘যতো কম বলা যায় ততোই ভাল। সিপিএমও মাতব্বরি করত, তবে এরা গায়ে একেবারে গায়ে হাত তুলে দেয়!’’
সেই দাপটে বীতস্রদ্ধ বেতবেড়িয়ে কি তাই লাল পার্টির প্রত্যাবর্তন চাইছে? বাকিটা, ভোটের ফলের উপরেই ছেডে় দিচ্ছেন তাঁরা।
সিপিএম অবশ্য তাদের দাপটের কথা মেনে নিলেও ‘অত্যচারের’ ইতিহাস খুঁজে পাচ্ছে না। দলীয় নেতারা বলছেন, ‘‘আমরা যদি তেমন হতাম তাহলে গ্রামের লোক আমাদের মিছিল করতে দিত?’’ মিছিল অবশ্য সহজে করতে পারছে না সিপিএম। এ যাবত ওই এলাকায় শাসক দলের ‘অত্যাচারের’ পাল্টা গল্প শোনাচ্ছে তারা। দলের এক নেতা বলছেন, গত পাঁচ বছরে ওই গ্রামে তাঁদের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচীই নিতে পারেননি। বলছেন, ‘‘পতাকা ওড়ানোর সাহসই পাইনি আমরা।’’
সেই হারানো সাহস পেলেন কী করে? জোট প্রার্থী সামসুল ইসলাম মোল্লা বলছেন, ‘‘মানুষই ভরসা জুগিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাই বেতবেড়িয়া জুড়ে একই সঙ্গে বাম-কংগ্রেস যৌথ মিছিল করেছি আমরা।’’ জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা স্বপনকুমার ঘোষ, চাপড়া ব্লক কংগ্রেস সভাপতি নাসিরুদ্দিন শেখ, সিপিএমের জোনাল সম্পাদক হেকমত আলি শেখ পা মিলিয়েছিলেন সেই মিছিলে। এ দিন জোট প্রার্থীর মিছিলকে কেন্দ্র করে যাতে অশান্তি না হয় সে জন্য পুলিশও ছিল গ্রামে।
এতদিন এই এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচী করতে পারেননি কেন? চাপড়ার জোট প্রার্থী সিপিএমের সামসুল ইসলাম মোল্লা বলেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে এই এলাকায় শাসকদল সন্ত্রাস করছে। আড়াই বছর আগে সেখানে স্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের এক কর্মীকে খুন করতে হাত কাঁপেনি ওদের (তৃণমূল)। আমাদের বহু কর্মী এখনও ঘরছাড়া। অনেক কর্মীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোও হয়েছে। তার পরেও এই যে মিছিল করলাম, এটাই বড় পাওনা।’’
এই গ্রামের তৃণমূমের সন্ত্রাসের একাধিক অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁরা। সেই মত নির্বাচন কমিশনের লোকজনও গ্রামে সরজেমিন তদন্ত করেন। তারই ফলে কিছুটা সাহস পেয়েছে সিপিএম, মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে।
২০১৩ সালে ৬ অক্টোবর বেতবেড়িয়া হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির নির্বাচনে গ্রামের রমজান আলি শেখ সিপিএমের প্রার্থী হয়েছিলেন। সেই ‘অপরাধে’ রমজানের বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূল। খুন হন তাঁর ভাই আসাদুল শেখ। সেই থেকে সিপিএমের অনেক নেতাই ঘরছাড়া। এখনও ১৪৯জন সিপিএম কর্মী ঘরছাড়া রয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
চাপড়া বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূলের প্রার্থী রুকবানু রহমান সন্ত্রাসের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন—“স্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচনে সিপিএমের দুষ্কৃতীরা হামলা চালাতে এসেছিল। এলাকার লোকজন প্রতিরোধ করলে এক জন খুন হন।’’ তার মানে গ্রামের মানুষই খুন করেছিলেন আসাদুলকে? রুকবানুরের কাছে তার কোনও উত্তর ছিল না।