রঘুনাথগঞ্জে দিন গুনছে শ্মশানও

গোটা শ্মশানটাই এ বার জলে তলিয়ে যাবে না তো! ভাগীরথীর ভাঙনের মুখে শহরের প্রাচীন শ্মশানটি আর কত দিন টিকে থাকবে সে নিয়ে রঘুনাথগঞ্জে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। শুধু শ্মশান নয়, ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০১:২৪
Share:

ভাঙনের মুখে রঘুনাথগঞ্জের শ্মশান। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

গোটা শ্মশানটাই এ বার জলে তলিয়ে যাবে না তো!

Advertisement

ভাগীরথীর ভাঙনের মুখে শহরের প্রাচীন শ্মশানটি আর কত দিন টিকে থাকবে সে নিয়ে রঘুনাথগঞ্জে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। শুধু শ্মশান নয়, ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকাও। শ্মশানের সমস্ত কাঠের চুল্লি-সহ বেশির ভাগ এলাকা নদীর জলে তলিয়ে গিয়েছে। পাশে বৈদ্যুতিক চুল্লির সামনের গার্ডওয়ালও ভেঙে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে শ্মশান রক্ষায় বালির বস্তা ফেলার কাজ শুরু হলেও সেচ দফতরের কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, স্থায়ী ভাবে পাথরের স্পার বাঁধানো না হলে বিপদ কমার কোনও সম্ভাবনা নেই।

পুরশহর হিসেবে রঘুনাথগঞ্জের বয়স দেড়শো ছাড়িয়েছে। মুর্শিদাবাদের এই শ্মশানটিও বহু প্রচীন। বীরভূম, ঝাড়খণ্ড থেকেও মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় এই শ্মশানে। প্রতিদিন অন্তত ১৫টি করে শবদাহ হয় এখানে। গঙ্গা দূষণ রোধ পরিকল্পনায় জঙ্গিপুরের প্রাক্তন সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সরকার শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লির অনুমোদন দেয়। তা চালুও রয়েছে। জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘‘বছর পনেরো আগে ভাগীরথীর পাড় পাথর দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়ায় শহরে ভাঙন রোখা গিয়েছিল। সপ্তাহ খানেক হল ফের ভাঙন শুরু হয়েছে। শহরের মাড়োয়াড়ি ঘাট থেকে গাড়ি ঘাটের আগে পর্যন্ত ভাগীরথীর পাড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটল ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। শহরের সবচেয়ে জনবহুল বাজার এলাকার পরিস্থিতিও বিপজ্জনক হয়েছে।’’

Advertisement

ইতিমধ্যেই শ্মশানের প্রায় সব ক’টি কাঠের চুল্লি ভাগীরথীর গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। বৈদ্যুতিক চুল্লিটির সামনের গার্ডওয়াল ভেঙে পড়েছে। পাশেই মন্দির। শবযাত্রীদের বিশ্রামকক্ষ টিকে রয়েছে নদী থেকে ৫ মিটার দূরে। এই অবস্থায় শহরের বাসিন্দারাও আশঙ্কায়। শ্মশানটিকে বাঁচাতে পাড় বরাবর বালি বোঝাই বস্তা ফেলছে সেচ দফতর। কিন্তু সে দেওয়াল কতক্ষণ টিকবে? সেচ দফতর ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সকলেই ভাঙন পরিস্থিতি দেখে গিয়েছেন। স্থায়ী ভাবে মেরামত করা হচ্ছে না কেন? সেচ দফতরের কর্তাদের সাফাই, ‘‘রাজ্য সরকারের আর্থিক অনুমোদন ছাড়া স্পার বাঁধানো যাবে না।’’ ততদিনে ভাঙন পরিস্থিতি কী আকার নেবে তা কেউ জানে না।

এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্য কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব বলেন, ‘‘এত দিন ভাগীরথীতে ভাঙন ছিল না। গত এক বছর ধরে ভাগীরথী দিয়ে কয়লা বোঝাই বার্জ চলাচল শুরু হয়েছে। সে বার্জের জলের ঢেউয়ের চাপ নিতে পারছে না ভাগীরথীর দুর্বল পাড়।’’ বাজার থেকে শ্মশান—সর্বত্র সেই কারণেই পাড় ভাঙতে শুরু করেছে বলে তাঁর পর্যবেক্ষণ। সোহরাবের দাবি, ‘‘এ নিয়ে গত রবিবার সেচ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর নির্দেশেই শ্মশানটিকে বাঁচাবার জন্য সেচ দফতর রবিবার থেকে বালির বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে।’’ কিন্তু এতে কাজের কাজ কতটুকু হবে সংশয়ে তিনিও।

রঘুনাথগঞ্জ মহকুমা শহর। একবার যদি ভাঙন শুরু হয় তা ঠেকানো কঠিন হবে বলে মত অনেকের। রঘুনাথগঞ্জের ভাঙন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক তা মানছেন জেলার ভাঙন প্রতিরোধ বিভাগের কর্তারাও। দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই নদী পথে সপ্তাহে অন্তত চার-পাঁচটি করে বার্জ ফরাক্কার এনটিপিসি যাচ্ছে। কয়লা বোঝাই বার্জ চলায় জলের স্রোতের চাপেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’

তাঁর কথায়, ‘‘বার্জ যাওয়া বন্ধ না হলে ভাঙন চলতে থাকবে।’’ তিনি জানান, শ্মশানে জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী কাজ শুরু হয়েছে। আগামী সাত দিন তা চলবে। স্থায়ী ভাবে শ্মশানের ভাঙন রোধে জন্য ৭৫ লক্ষ টাকার এবং শহরের ভাঙন রোধে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার দু’টি পৃথক প্রকল্প তৈরি করে সেচ দফতরে পাঠানো হয়েছে। আর্থিক অনুমোদন মিললেই বর্ষার পরে কাজ করা হবে।

ওয়াকিবহল মহলের মত, সে কাজে যত দেরি হবে রঘুনাথগঞ্জের বিপদ তত বাড়বে!

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement