বাঁ দিকে, চরের সোঁতা পেরিয়ে খড়ের গাদার আড়ালে পাচার এক চেনা ছবি। ডানদিকে, উদ্ধার হওয়া পিস্তল ও গুলি।
দরদস্তুর করে ৩৫ হাজার টাকায় রফা হয়। রফা মতো মাল আনার টোপ দিয়ে বুধবার রাতে ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় আগ্নেয়াস্ত্রের এক বড়সড় কারবারিকে গ্রেফতার করল সুতি থানার পুলিশ।
জামাল শেখ নামে ওই কারবারির কাছ থেকে মিলেছে ৫টি পিস্তল, ৪ রাউন্ড তাজা গুলি ও ৭ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক। জামালের বাড়ি সুতির চাঁদামারি গ্রামে। পাশের গ্রাম মদনা মোড়ে লেনদেনের অছিলায় পুলিশ হাতেনাতে ধরে জামালকে। এর আগেও আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে জামাল ও তার এক ছেলে তিতাস শেখ। দীর্ঘ দিন ধরেই সুতিতে এই কারবার চালাচ্ছিল জামাল ও তিতাস। তবে তিতাসকে এ দিন ধরা যায়নি।
এ দিনই বিকেলে সুতির খাঁপুর মোড় থেকে মাদক সহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে মিলেছে ৩০০ গ্রাম হেরোইন ও ৫ লিটার কোডেন ফসফেট মিক্সচার। যা কাশির সিরাপ হলেও বাংলা দেশে মাদক হিসেবে প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ থেকে পাকুড় হয়ে আগ্নেয়াস্ত্রগুলি এনেছিল জামাল। বিক্রির জন্য খদ্দেরের খোঁজে ছিল। তখনই আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক সহ পুলিশের টোপে ধরা পড়ে সে। এ দিনই বিকেলে ৩০০ গ্রাম হেরোইন ও ৫ লিটার কোডেন মিক্সচার সহ ধরা পড়েছে আরও দু’জন মাদক কারবারি। মাদক এসেছিল কালিয়াচক থেকে। আরও তিন জনের খোঁজ চলছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুতি এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক কেনাবেচার বহু দিনের পাকা কারবারি জামাল। এর আগেও জামাল ও তিতাস দু’জনেই আগ্নেয়াস্ত্র সহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। এই সব আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক আনা হত পাশেই ডাকবাংলো মোড় দিয়ে ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ ও পাকুড় থেকে। সরাসরি সুতিতে নিজের বাড়িতে এনে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ও বীরভূম লাগোয়া গ্রামগুলিতেও বিক্রি করত তারা।
গত কিছু দিন থেকেই জামালের বাড়িতে বাইকে চড়ে অচেনা লোকজনের আনাগোনা বাড়ছিল । সেই সূত্র ধরেই কথা যায় পুলিশের কানে। সোর্সকে কাজে লাগিয়ে টোপ ফেলে পুলিশ। এর আগে তিন তিন বার আগ্নেয়াস্ত্র কেনার জন্য যোগাযোগও করা হয় জামালের সঙ্গে সোর্স মারফত। একবার দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র ভাল দামে কেনাও হয়। এ বার রফা হয় ৩৫ হাজারে। ৩টি দেশি পিস্তল, ২টি ৭ এম এম পিস্তলের সঙ্গে গুলি এবং বিস্ফোরক ফ্রি। দুঁদে পাচারকারী হলেও, দরদস্তুর হচ্ছে দেখে ফাঁদে পা দেয় জামাল।
ঠিক হয় প্রথমে তার বাড়ি চাঁদামারিতে হবে লেনদেন। কিন্তু পরে জায়গা বদলায় জামালই। ঠিক হয় বাড়ি থেকে মাইল খানেক দূরে মদনার মোড়ে বুধবার রাত ৮টা নাগাদ মাল নিয়ে আসবে জামাল। পুলিশ সেই মতো সাদা পোশাকে অপেক্ষা করতে থাকে সন্ধে সাড়ে ৭টা থেকেই। শীতের সন্ধেয় সে ভাবে লোকজন ছিল না রাস্তায়। জামাল সেখানে পৌঁছতেই পুলিশ তাকে ঘিরে ফেলে। সঙ্গের ব্যাগ দু’টি থেকে মেলে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক।
এ দিনই বিকেলে সুতি থানার পুলিশের একটি দল খবর পায় খাঁপুর মোড়ে হেরোইন ও সিরাপ নিয়ে আসা হয়েছে কালিয়াচক থেকে। সেখানেই এক জনকে তা দেওয়া হবে। সেখানে যেতেই পুলিশের নজরে আসে ব্যাগে ভরা একটি জ্যারিকেন নিয়ে অপেক্ষা করছে এক যুবক। তাকে জেরা করতেই পালানোর চেষ্টা করে। তখনই পুলিশ ধরে ফেলে তাকে। যুবক তার নাম জানায় আব্দুল লতিব, বাড়ি সুতির ছাবঘাটি মালোপাড়া। তাকে জেরা করে খিদিরপুরের কাহারপাড়া থেকে তেনু দাস নামে আর এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
• ১২ জানুয়ারি ২০১৯:
সুতির ডিহিগ্রামের কাছে একটি পিকনিক স্পটে মেলে দশটি ৭ এমএম পিস্তল এবং ৫০ রাউন্ড ৭.৬৫ এমএম তাজা গুলি। গ্রেফতার করা হয় ছবি সিংহ নামে এক ব্যক্তিকে।
• ১৪ জানুয়ারি ২০১৯:
একশো কিলো গাঁজা ছোট ছোট প্যাকেটে ভরে গাড়ির মধ্যে চোর কুঠুরি তৈরি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কোচবিহার থেকে জলঙ্গিতে। গাড়ির চালক সহ ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
• ১০ মার্চ ২০১৯:
সুতিতে ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র মেলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর ধলার মোড়ে। সঙ্গে ৩ রাউন্ড গুলি। ধৃত ব্যক্তির নাম আব্দুস সালাম।
• ২৪ মার্চ ২০১৯:
গাছের তলা খুঁড়ে মিলল গুলি। আর বাড়ির গোয়ালঘরের পাকা দেওয়ালের গা ঘেঁষে গর্ত খুঁড়তেই বের হল সার দিয়ে সাজিয়ে রাখা মাস্কেট ও আগ্নেয়াস্ত্র। সুতি থানার সাদিকপুর গ্রামের নামোপাড়ায়।
• ১৫ জানুয়ারি ২০২০:
জঙ্গিপুর পুলিশ জেলা হওয়ার পর উদ্ধার হয় ৫টি পিস্তল ও ৪ রাউন্ড গুলি । সঙ্গে ৭ কেজি বিস্ফোরক। গ্রেফতার জামাল শেখ।