কামরুর সঙ্গে পুলিশের খেলা, বলছে সিপিএম

এ যেন লুকোচুরি খেলা চলছে পুলিশে-কামরুজ্জামানে। খেলাই, সত্যি করে তার বেশি কিছু নয়। কামরু প্রকাশ্যে আসার দু’দিন পরেও পুলিশ তাঁর নাগাল পাচ্ছে না বলে দাবি করায় এমনই কটাক্ষ সিপিএমের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমকল শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১২
Share:

কামরুজ্জামান। —ফাইল চিত্র

এ যেন লুকোচুরি খেলা চলছে পুলিশে-কামরুজ্জামানে। খেলাই, সত্যি করে তার বেশি কিছু নয়।

Advertisement

কামরু প্রকাশ্যে আসার দু’দিন পরেও পুলিশ তাঁর নাগাল পাচ্ছে না বলে দাবি করায় এমনই কটাক্ষ সিপিএমের। শনিবার দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নারায়ণ দাস বলেন, ‘‘আমাদের যে কর্মীকে খুন করেছে কামরুজ্জামান, তাঁর বাড়ির লোকেরাই আমাদের নিয়মিত জানিয়ে যাচ্ছেন এই লুকোচুরি খেলার কথা।

সিপিএমের অভিযোগ, পুলিশ একেবারেই নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। ভোটের সময়ে নির্বাচন কমিশনের চাপে যা-ও বা সিধে হয়েছিল, এখন ফের শাসকদলের কাছে মাথা নুইয়ে দিয়েছে। সে কারণেই কামরু কোথায় আছে জেনেও চোখ বুজে আছে। নারায়ণবাবুর দাবি, ‘‘দিনে দু’এক বার পুলিশ তার বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছে আর ঘুরে আসছে। তার গতিবিধি সব জেনেও তাকে ধরছে না।’’

Advertisement

যদিও পুলিশ এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের কথায়, সর্বত্র কামরুজ্জামানের খোঁজ চলছে। কিন্তু তার দেখা মিলছে না। এলাকার লোক দেখতে পাচ্ছে, অথচ শুধু পুলিশই কামরুজ্জামানকে দেখতে পাচ্ছে না? এসডিপিও (ডোমকল) মাকসুদ হাসান এ দিন আর এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

গত বিধানসভা নিবার্চনের দিন ডোমকলের হরিডোবা গ্রামে বুথের সামনে বোমায় খুন হন সিপিএমের পোলিং এজেন্ট তহিদুল ইসলাম। সেই খুনের সরাসরি নাম জড়ায় এলাকার নেতা, রাজ্য যুব তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সৌমিক হোসেনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কামরু। ওই ভোটে সৌমিকই ছিলেন ডোমকলের তৃণমূল প্রার্থী। এবং তিনি আগাগোড়া দাবি করে আসছেন, কামরুজ্জামান পুরোপুরি নির্দোষ, তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এ বারের বিধানসভা ভোটের দিন এই খুনই গোটা রাজ্যে এক মাত্র প্রাণহানির ঘটনা। পুলিশের দাবি, ঘটনার পর থেকেই কামরুজ্জামান এলাকাছাড়া। কিন্তু নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেই তাঁকে এলাকায় দেখা গিয়েছিল বলে অভিয়োগ তহিদুলের পরিবারের। স্থানীয় তৃণমূল সূত্রের দাবি, গোড়ায় পালালেও তৃণমূল বিপুল আসন নিয়ে জিতে আসার পরে দিব্যি এলাকায় ফিরে আসেন তিনি। নিজের বাড়িতে থেকে ব্যবসাও সামলাচ্ছিলেন। তবে সভা-সমিতি, মিটিং-মিছিলে যোগ দিচ্ছিলেন না।

এর অন্যথা ঘটে বৃহস্পতিবার। তৃণমূল ডোমকল পঞ্চায়েত সমিতি দখল করার পরেই বিজয়োৎসবে এসে হাজির হন কামরুজ্জামান। কর্মীদের হাতে সবুজ আবির মাখেন, মিষ্টিমুখ করেন। সিপিএম নেতাদের মতে, পুলিশের সঙ্গে ‘পরামর্শ’ করে এবং তাদের ‘অনুমতি’ নিয়েই তিনি ব্লক অফিসের সামনে এসেছিলেন। তা না হলে যেখানে অন্তত শ’খানেক পুলিশ দাঁড়িয়ে, এক জন ফেরার আসামি কোনও লুকোছাপা না করে সেখানে সহাজির হওয়ার সাহস দেখায় কী করে? এমনকী, সংবাদমাধ্যমের লোকজন তাঁকে চিনতে পেরে ছবি তুলতে শুরু করেছে দেখে পুলিশের দুই কর্মী গিয়ে সাবধান করে তাঁকে সরিয়ে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ অবশ্য এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। পুলিশকর্তারা দাবি করছেন, ব্লক অপিসের সামনে হাজির শতাধিক পুলিশকর্মীর কেউই কামরুজ্জামানকে চিনতে পারেননি। তাই তাঁকে ধরাও যায়নি। তিনি সরে পড়ার পরেই খবর পেয়ে সকলে নড়েচড়ে বসে। যদিও নিচুতলার পুলিশকর্মীদেরই একাংশ কর্তাদের এই দাবি শুনে মুখ টিপে হাসছেন। তাঁদের বক্তব্য, কামরুকে চেনে না, এমন লোক ওই তল্লাটে কমই আছে। আগে যাঁরা চিনতেন না, তাঁরাও ওই খুনের ঘটনার পরে একাধিক বার সংবাদপত্রে ছাপা হওয়া ছবি দেখে চিনে গিয়েছেন। সেখানে অত পুলিশের কেউ তাঁকে চিনতে পারেনি, এমন কথা শিশুও বিশ্বাস করবে না।

তহিদুলের স্ত্রী মুর্শিদা বিবির অভিযোগ, ‘‘কামরুজ্জামান আর পাঁচটা লোকের মতোই এলাকায় ঘুরছে। এমনকী, আজকাল দলের নানা সভায় যোগ দিচ্ছে বলে শুনতে পাচ্ছি।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘দলদাস’ পুলিশ যে কিছু করবে না, তা তাঁরা বুঝেই গিয়েছেন। সাম্প্রতিক চোর-পুলিশ খেলায় তা আরও পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। মুর্শিদা বলেন, ‘‘আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আশা করি, বিচার পাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement