এলাকার বাসিন্দাদের কথা ভেবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে কল্যাণী পুরসভার লেক। নিজস্ব চিত্র
চার দেওয়ালে বন্দি ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস। কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসের কথা বলছে ৫৬টি ঘর। ইতিহাসের নানা টানাপড়েন চাক্ষুস করতে হলে আসতেই হবে কল্যাণীর লেকে।
বছর দুয়েক আগে পরীক্ষামূলক ভাবে ভারত দর্শন কক্ষ চালু করেছিল কল্যাণী পুরসভা। তারপর তা বন্ধ হয়ে যায়। কাউন্সিলর নীলিমেশ রায়চৌধুরী জানান, সে সময় কিছু বিচ্যুতি ছিল। সে সব শুধরে এ মাসের ১৭ তারিখ থেকে দর্শকদের জন্য ভারত দর্শনের ঘর খুলে দেওয়া হয়েছে। কয়েক বছর আগে লেকের সৌন্দর্যায়নের জন্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ করে। ওই টাকায় লেকে বসার জায়গা বানানোর পাশাপাশি তৈরি করা হয় ভারত দর্শন কক্ষ।
ভিতরে ঢুকলে প্রথমেই দেখানো হচ্ছে প্রাণের উদ্ভব কী ভাবে হয়েছে। অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীর ভাষ্য পাঠে মূর্ত হয়ে উঠেছে সিন্ধু সভ্যতা থেকে দেশস্বাধীনের কালপর্ব। সিন্ধু সভ্যতা, আর্য সভ্যভার গোষ্ঠী জীবন, শ্রমের বিভাজন, ষোড়োশ মহাজন পদের উদ্ভব, মগধের ক্ষমতাবৃদ্ধি, মৌর্য সাম্রাজ্য, সাতবাহন সাম্রাজ্য, কুষান সাম্রাজ্য, গ্রিকদের অনুপ্রবেশ, সুলতানি যুগ, এমনকী বাংলার পাল-সেন যুগ, ব্রিটিশের অনুপ্রবেশ ও তার বিরুদ্ধে তৈরি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, সব শেষে দেশ ভাগ তথা স্বাধীনতা। সদ্য স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জহরলাল নেহরুর শপথগ্রহণ—এ সবের দেখা মিলছে লেকের ভারতদর্শন ঘরে। এক একটা কক্ষ ইতিহাসের এক একটা সময়ের কথা বলছে। রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে রামায়ণ ও মহাভারতের প্রসঙ্গ, যুদ্ধ, ভীষ্মের শরশয্যার কথাও শোনা যাচ্ছে ভারতদর্শন ঘরে। নীলিমেশবাবু জানাচ্ছেন, দর্শকেরা ভালই আসছেন। বিশেষ কিছু কিছু দিনে ভারত দর্শনের টিকিট কাটলে তাঁরা লেকে প্রবেশের টিকিটের দাম নিচ্ছেন না। সোমবার দেখা গেল জনা কুড়ি লোক একমনে দেখে চলেছেন ভারত ইতিহাসের চিত্ররূপ। চাকদহের বাসিন্দা অনিন্দিতা সরকার তাঁর বন্ধুকে নিয়ে এই দিন লেকে এসেছিলেন। ভারত দর্শন সেরে বেরোনোর পর তিনি বললেন, ‘‘ঘণ্টা দুয়েকে যে ভাবে প্রাগোতৈহাসিক যুগ থেকে এখনকার ভারতের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে, তা এককথায় অনবদ্য।