ফের ভর্তি হলেন হাসপাতালে
Jakir hossain

তদন্তে ‘দেরি’ নিয়ে ক্ষোভ জাকিরের

শুক্রবার সন্ধ্যায় চিকিৎসকদের পরামর্শে ক্রাচের সাহায্যে তিনি কয়েক পা হাঁটেন। সোমবার পর্যন্ত এ ভাবে এক পা, দু’পা করে হাঁটানোর পর তাঁর সুস্থতার গতি বোঝার চেষ্টা করবেন ডাক্তাররা

Advertisement

বিমান হাজরা

সুতি শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২১ ০৬:২২
Share:

ফাইল চিত্র।

মাঝে বাড়িতে কয়েকদিনের বিশ্রাম। এ বার ফের চিকিৎসার জন্য কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হলেন বোমা বিস্ফোরণে আহত, প্রাক্তন শ্রম প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।

Advertisement

সূত্রের খবর, আপাতত সুস্থ হলেও পায়ের সমস্যা এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়নি জাকিরের। শুক্রবার সন্ধ্যায় চিকিৎসকদের পরামর্শে ক্রাচের সাহায্যে তিনি কয়েক পা হাঁটেন। সোমবার পর্যন্ত এ ভাবে এক পা, দু’পা করে হাঁটানোর পর তাঁর সুস্থতার গতি বোঝার চেষ্টা করবেন ডাক্তাররা। তারপর তাঁরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। তখনই স্থির হবে, তাঁকে আর কতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এখনও দু’ থেকে আড়াই মাস লাগবে জাকিরের স্বাভাবিক ছন্দে পা ফেলে হাঁটতে। তবে বর্তমানে তিনি সবদিক থেকেই বিপন্মুক্ত। পা নিয়েও বাড়তি আশঙ্কার কিছু নেই।

এদিকে, নিমতিতা বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তে আরও এক দফা অরঙ্গাবাদ ঘুরে গিয়েছেন কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র অফিসাররা। সুতি থানাতেও যান তাঁরা। এলাকায় বিস্ফোরকের কারবারে নানা সময় গ্রেফতার হয়েছে পুলিশের হাতে, এমন কিছু দুষ্কৃতীদের তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পাশাপাশি, স্থানীয় থানার পুলিশের কাছ থেকে তাঁরা কিছু প্রয়োজনীয় নথিপত্রও নিয়েছেন। তবে এনআইএ তদন্তভার হাতে নেওয়ার প্রায় তিন মাস হতে চলল। সূত্রের খবর, এ বার এই বিস্ফোরণ মামলায় চার্জশিট দেওয়ার পথে এগোচ্ছে তারা। তবে এখনও পর্যন্ত এনআইএ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা ছাড়া তদন্তে বড়সড় সাফল্য পায়নি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা নাগাদ নিমতিতা স্টেশনে ট্রেন ধরতে যাচ্ছিলেন জাকির। সেই সময় দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে বোমা ফেটে জাকির-সহ ২৭ জন গুরুতর
আহত হন।

Advertisement

তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের হাত কিংবা পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে। জাকিরের বাঁ পায়ের গোড়ালিতে গুরুতর ভাবে জখম হয়। বোমা হামলায় রাজ্য সরকার সিআইডির পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের তিনটি সংস্থাকে নিয়ে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলকে (সিট) তদন্তভার দিয়েছিল। তারা দু’জনকে
গ্রেফতারও করেছিল।

হামলার রাতেই আজিমগঞ্জ জিআরপি থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছিল। পুলিশ একাধিক অন্য ধারার পাশাপাশি বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করে। ‘সিট’ দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল সুতি ও ঝাড়খণ্ড থেকে। পরে স্টেশন এলাকার ঘটনা বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে তদন্তভার নেয় এনআইএ। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় এনআইএ-র কলকাতা শাখার ডেপুটি সুপার বীরেন্দ্র সিংহকে। ধৃত দু’জনকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনআইএ। এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে দু’দফায় তারা জিজ্ঞাসাবাদ করে জাকিরকেও। সুতির তৃণমূল নেতা ইমানি বিশ্বাসকেও একাধিকবার এনআইএ ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ঝাড়খণ্ড ও সুতিতে বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে বহু ‘সন্দেহজনক নথি’ ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তারা উদ্ধার করেছে বলে দাবি এনআইএ-র। এরপরই ওই বিস্ফোরণ মামলায় ইউএপিএ-র ধারা জুড়ে দেয় তারা।

তবে অভিযোগ, এর বাইরে বিস্ফোরণ মামলার তদন্তে তেমন অগ্রগতি ঘটেনি। আড়াই মাস ধরে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি জাকির হোসেনের বাঁ-পায়ে আট বার অস্ত্রোপচার হয়েছে।

তবে অসুস্থতার মধ্যেও ‘তদন্তের ধীরগতি’ নিয়ে একাধিক বার হতাশা ব্যক্ত করেছেন জাকির। শনিবারও হাসপাতালে ভর্তি জাকির ফোনে বলেন, “আমি এতদিন হাসপাতালে পড়ে রয়েছি। কোনওরকমে লোকজনের সাহায্য নিয়ে কাজ করছি। আমার থেকেও ভয়াবহ অবস্থায় দিন কাটছে বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্য আহতদের। কারও পা বাদ গিয়েছে, কারও হাত, পা দুই-ই। এই অবস্থায় দোষীদের কঠোর শাস্তি চাইছি আমি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, যাঁরা এই ঘটনায় জড়িত তাদের যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুন।’’ এদিকে, রাজ্যের নয়া প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামান বিস্ফোরণ কাণ্ডে তদন্তে দেরির জন্য এদিনও সরাসরি কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “রাজ্য সরকার এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিল। ১৫ দিনের মধ্যে দু’জন গ্রেফতার হয়। তারপর এনআইএ তদন্ত শুরু করেছিল। কিন্তু আড়াই মাসে না তারা কাউকে ধরতে পেরেছে, না শেষ হয়েছে তদন্ত। এর পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement