সীমান্তের রাস্তা। পথ নিরাপত্তা নিয়ে চলছে পুলিশি টহল। ঠিক সেই সময় একটা মোটরবাইক এসে দাঁড়াল। বাইক চালকের পরনে লুঙ্গি, মাথায় হেলমেট। বাইকের স্টার্ট বন্ধ না করেই সে অত্যন্ত বিনীত ভাবে খোদ পুলিশকেই জানতে চেয়েছিল, ‘‘স্যর, বুধুরপাড়া কোন দিকে?’’
প্রথমে লোকটিকে ক্যাবলাকান্ত বলে পুলিশের মনে হলেও দুটো বিষয় ভাবিয়ে তোলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা রানিনগর থানার এক পুলিশ আধিকারিককে। এক, যুবকটিকে দেখে স্থানীয় মনে হলেও সে বুধুরপাড়া চেনে না। দুই, পরনে লুঙ্গি এবং মাথায় হেলমেট! কথায় কথায় পুলিশএর সন্দেহ আরও বাড়ে। যুবকটি মোটরবাইকে ফের স্টার্ট দেওয়ার আগেই পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় দোনলা বন্দুক।
সীমান্তের পথ মানেই পুলিশের কাছে বাড়তি চিন্তা। সাধারণত মোটরবাইকে মাদক নিয়ে এই পথে পাচার চলে। ফলে এই পথে বাইকে প্রায়ই তল্লাশি করে থাকে পুলিশ। ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তেমনই নজরদারি চলছিল রানিনগরের শেখপাড়া এলাকায়। পুলিশের দাবি, সাধারণত এই নজরদারির সময় যাঁদের মাথায় হেলমেট থাকে তাঁরা বুক ফুলিয়ে পুলিশের সামনে দিয়ে চলে যায়।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওই বাইক আরোহী খুব ধীর গতিতে চালাচ্ছিল বাইক। আর লুঙ্গি পরে যারা বাইক চালায় তারা সাধারণত এলাকার বাসিন্দা হয়। এই সহজ বিষয়টি না মেলার কারণেই সন্দেহ দানা বাঁধে। পরে তল্লাশি করে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পরে মালুম হয় সন্দেহটা অমূলক ছিল না।
সীমান্তের মুদি বা জুতোর দোকানের খাতায় লেখা থাকে বাঁচার লাঠি, দানা, ডাল। সেই খাতার সূত্র ধরে এক সময় আটক হয়েছিল এলাকার বড় অস্ত্রের কারবারি। পরে গোপনে খবর পেয়ে বা ফোনে আড়ি পেতে ‘অপারেশন’ চালিয়েছে পুলিশ।
এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘কিছু দিন আগেও ফোনের সূত্র ধরে ডোমকলের এক অস্ত্র কারবারিকে ফাঁদে ফেলি আমরা। একটি নাইন এমএম পিস্তল কিনতে ৩৪ হাজার টাকার টোপ দিয়ে মাঠে নামি আমরা। আর ভাল দাম পাওয়ায় আশায় পাখি এসে পড়ে খাঁচায়।’’ ‘জিনিস’ হাতে নিয়ে টাকা গুনে দেওয়ার পরে ওই কারবারিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ডোমকলে খুব সাধারণ ঘটনা। প্রায়ই এলাকার বিভিন্ন ডেরা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। কখনও চরের বালির নীচে আবার কখনও বাঁশবাগানের নীচে লুকিয়ে রাখা হয় অস্ত্র।
এ দিকে, পুলিশের নজরদারি বাড়তেই বেড়েছে অস্ত্রের দামও। ১৪ হাজার থেকে এক লাফে সেভেনএমএম এখন ২৪ হাজারে বিকোচ্ছে। ২৪ হাজারের নাইনএমএম এখন ৩৪ হাজার। দেড় হাজারের ওয়ান শটার এক লাফে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, একে সামনে লোকসভা। তার পরে পুলিশের তল্লাশি বেড়েছে। ফলে চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্রের দামও বাড়ছে।