সবে সকাল, ঘড়ির কাঁটা আটটাও পেরোয়নি। সুতির চাঁদের মোড়ে, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের লাগোয় ধাবা সারা রাতের ধকল শেষে একটু ফাঁকা। ঘটনাটি গত বছরের অগষ্ট। ধাবার কাছেই ঘাঁটি গেড়ে অপেক্ষায় সুতি থানার জনা পাঁচেক সাদা পোশাকের পুলিশ। আছেন সুতি থানার ওসি বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ। সকাল গড়িয়ে দুপুর। দফায় দফায় চায়ে চুমুক। ধাবার দুই প্রান্তে এ ভাবে সাদা পোশাকে হলেও পরিচিত পুলিশ অফিসারদের দীর্ঘ প্রতীক্ষা এলাকার মানুষেরও চোখ এড়ায়নি। কিন্তু কে আর সাহস করে জিজ্ঞেস করে ?
কিন্তু যাদের জন্য অপেক্ষা তারা কোথায়? অথচ খবর ছিল সকালেই ধাবায় আসবে ওরা। তবে কি তারা রুট বদলাল? সংশয় দানা বাঁধতে শুরু করে পুলিশের মনেও। ঘড়ির কাঁটা বেলা সাড়ে ১২টা। অর্থাৎ সাড়ে ৪ ঘন্টা পার। হঠাৎই নজর পড়ে, মালদহের দিক থেকে আসা একটি বেসরকারি বাস থেকে নামল দু’জন। হাতে দু’টো ব্যাগ। দুপুরের কড়া রোদে ফাঁকা রাস্তায় লোকজন সে ভাবে চোখে পড়ছে না। দু’জনেই এগিয়ে গেল ধাবার দিকে। ধাবাতেও তেমন খদ্দেরপাতি নেই। সামনেই দাঁড়িয়ে দুটি লরি। দু’দিকে দুই চেয়ার টেনে বসল তারা। কারও জন্য তারা যেন অপেক্ষা করছে। ততক্ষণে কেটে গেছে আরও মিনিট দশেক। ইতিমধ্যেই ব্যাগটা এক জনের হাতে দিয়ে অন্যজন একটু এগিয়ে গেছে ধাবার পিছনের দিকে। কেটে গেছে মিনিট দশেক। সে কিন্তু ফিরছে না। তবে কি আঁচ পেল কিছু ?
না, আর অপেক্ষা নয়। ধীরে ধীরে দু’দিক থেকে এগিয়ে ধাবায় ঢুকে পড়ল তারা। ঘিরে ফেলল জোড়া ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক জনকে। তাকে ঘিরে ফেলা হচ্ছে বুঝে ব্যাগ ফেলে পালাবার চেষ্টা করতে গিয়ে টেবিলের পায়ায় ঢাক্কা খেয়েই উল্টে পড়তেই ধরা পড়ে গেল সে। তার হাত ছাড়িয়ে পালাবার চেষ্টা করতেই সপাটে চড়। চড় খেয়েই সে আছড়ে পড়ল টেবিলের উপর। ধমক দিতেই জানা গেল, ধৃতের নাম মোস্তাহেরুল ইসলাম। বাড়ি নিমতিতার শেরপুরে। ততক্ষণে ব্যাগ খুলে তল্লাশি করতেই পুলিশের চোখ কপালে উঠেছে। দুটি ব্যাগের মধ্যে ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১০০ রাউন্ড গুলি ও ২৪টি ম্যাগাজিন। আগ্নেয়াস্ত্রের ১২টিই ৭.৬৫ এম এম ও ৮টি ওয়ান শটার।
কিন্তু কোথায় তার সঙ্গী? দু-এক ঘা পড়তেই জানাল সে নাম-ধাম। এমনকি খদ্দেরের নামও।
লাবু শেখ এসেছে কালিয়াচকের শেরসাহি নয়াগ্রাম থেকে। ধাবায় তখন তিনটি টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছিল লরির চালক, খালাসিরা। তারাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না কি ঘটছে। খাওয়া থেমে গেছে তাদের।
এবার ঝুলি থেকে বেরোতে শুরু করল বিড়াল। ধৃত মোস্তাহেরুল একসময় নিমতিতায় থাকলেও এখন সে কালিয়াচকের সুলতানগঞ্জ কলেজ মোড়ের বাসিন্দা। ধমক খেয়েই জানাল, ক্লাস ইলেভেনে পড়ি স্যর, ছেড়ে দিন। স্কুলের ছাত্র শুনে পুলিশ একেবারে থ।
জেলায় মাদক ও জাল নোটের কারবারে পড়ুয়াদের জড়িত থাকার খবর আসছিল, এ বার হাতেনাতে ধরা পড়ল এক জন।