সৌমিক হোসেন। —ফাইল চিত্র
সরকারি অনুষ্ঠানে বিরোধীদের ব্রাত্য রাখা প্রায় রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তৃণমূল শাসিত সরকারের। সেই ট্রাডিশন নিজেই ভেঙে মাস কয়েক আগে বহরমপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন স্থানীয় কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীকে।
তা বলে, সরকারি অনুষ্ঠানে দলীয় নেতারা বাদ পড়েছেন, এমনটা সচরাচর দেখা যায়নি। অন্দরের লড়াইয়ে নিজের খাস জমিতে এ বার ব্রাত্য হয়ে সে নজির গড়লেন ডোমকলের প্রাক্তন পুরপ্রধান সৌমিক হোসেন।
বছর খানেক আগের দাপুটে পুরপ্রধান সৌমিককে এ বারের ডোমকল পুরসভার যুব উৎসবে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। সৌমিক নিজেই বলছেন, ‘‘আমি কোনও আমন্ত্রণ পাইনি।’’ তৃণমূলের ওই যুব নেতার দাবি, অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে অন্ধকারে রেখেই যাবতীয় কর্মকাণ্ড চলছে। গোটা বিষয়টি রাজ্যের যুব কল্যাণ দফতরের আধিকারিককে জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, যাঁদের হাতে এই আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্ব ছিল সেই ব্লক যুব কল্যাণ আধিকারিক নিক্কন মণ্ডলকে ফোন করা হয়েছিল। তবে তাঁর সাড়া মেলেনি। দফতরের জেলা আধিকারিক মলয় শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বিষয়টি ব্লক স্তরেই হয়ে থাকে, ফলে আমার কিছুই জানা নেই ওই বিষয়ে। কেন এমনটা হয়েছে বলতে পারব না।’’
বছর কয়েক আগে ডোমকল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এলাকার বিধায়ক সিপিএমের আনিসুর রহমানকে। অভিযোগ, সৌমিক এবং তাঁর তাঁবেদার তৃণমূল নেতাদের চাপে পড়ে অনুষ্ঠানের আগে আনিসুরের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল— অনুষ্ঠানে আসার প্রয়োন নেই। বাম নেতারা বলছেন, ইতিহাস ফিরে আসে!
তৃণমূলের অন্দরের খবর, আদতে তৃণমূলের নতুন আর প্রাক্তনের বিরোধের জেরেই এমনটা হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানের সভাপতি ডোমকল পুরসভার নতুন পুরপ্রধান জাফিকুল ইসলাম অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমাদের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সৌমিক কেন এমন অভিযোগ তুলছেন আমরা বুঝতে পারছি না।’’
প্রাক্তন পুরপ্রধান সৌমিক হোসেনের সঙ্গে বর্তমান পুরপ্রধান জফিকুল ইসলামের ‘লড়াই’ এ বার একেবারে প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। দিন কয়েক আগেও সৌমিকের বিরুদ্ধে ভুতুড়ে ওয়ার্ডের নাম দিয়ে অর্থ তছরুপের অভিযোগ তুলেছিলেন জাফিকুল।
যদিও দলের মধ্যে এই গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে মুখ খুলতে চাননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবু তাহের খান। তার দাবি, ‘‘ওই ব্যাপারে বিন্দুবিসর্গ আমার জানা নেই, ফলে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’
একটা সময় বিরোধীদের সরকারি কোন অনুষ্ঠানে বিরোধী নেতা তো দূরস্থান, জনপ্রতিনিধিরাও ডাক পেতেন না। এখনও অধিকাংশ সরকারি অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ পান না তাঁরা বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এ বার সেই তালিকায় উঠে এল দলীয় নেতার নাম।
ডোমকলের সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, ‘‘মনে রাখবেন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়। আমরা কম অপমানিত হইনি। কিন্তু সেই পুনরাবৃত্তি যে এত তাড়াতাড়ি ফিরবে, সেটা ভাবতে পারিনি। একেই বলে হিস্ট্রি রিপিটস!’’