বিধানসভা ভোটের সাফল্যের পর এবার ঘর পরিষ্কারে নামল নদিয়া জেলা তৃণমূল। সরকারি ভাবে না বলা হলেও, দলের অন্দরে খবর তেমনটাই। তারই অঙ্গ হিসেবে তেহট্ট মহকুমার দুই ব্লকের সভাপতিকে সরিয়ে দেওয়া হল। ছাঁটাইয়ের তালিকায় নাম রয়েছে আরও কয়েক জনের।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুদ্ধকরণের নির্দেশ দিয়েছেন। তেহট্ট মহকুমার দুই ব্লক সভাপতির অপসারণ তারই শুরু বলে মনে করছে শাসক দলের নেতারাই। বলা বাহুল্য এই পদক্ষেপের পর দলের অনেক নেতারাই আতঙ্কে রয়েছেন। অবশ্য দলে বিদ্রোহের ইঙ্গিতও মিলেছে।
তেহট্ট-২ ব্লকের বিশ্বনাথ ঘোষের বিরুদ্ধে সরাসরি দল বিরোধী কাজের অভিযোগ এনেছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তাপস সাহা। অভিযোগ, বিধানসভা ভোটে বিশ্বনাথবাবু ও তাঁর দলবল তাপসবাবুকে হারাতে সরাসরি সিপিএম প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেছিল। শুধু তাই নয়, দলের তরফে বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও তাঁকে বিরত করা যায়নি।
তাপস সাহা বলেন, “আমাকে হারানোর জন্য সব রকম চেষ্টা করেছিলেন উনি। নিজের বুথে এজেন্ট পর্যন্ত দেন নি। এখনও সিপিএমের লোক এনে পার্টি অফিস দখল করে রেখেছে।”
তার সঙ্গেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে করিমপুর-১ ব্লকের চিররঞ্জন মন্ডলকেও। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি দল বিরোধী কাজের কোন অভিযোগ নেই বলেই তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে, দলেরই একটা অংশ মনে করছেন, বিধানসভা ভোটে তার অনুগামীরা দলীয় প্রার্থী মহুয়া মৈত্রকে সে ভাবে সহযোগীতা করে নি। যদিও প্রচারে সর্বত্রই তাকে দেখা গিয়েছিল।
তবে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে, তাঁকে সরানোর পিছনে বয়সও একটা কারণ বলে দলীয় সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। এই মুহুর্তে চিররঞ্জনবাবুর বয়স প্রায় ৮২ বছর। তাঁর অনুগামীদের অভিযোগ, চিররঞ্জনবাবুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে।
অবশ্য, তাঁকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত কম বয়েসের কাউকে সভাপতি করার জন্য প্রথম থেকেই সওয়াল করে আসছেন মহুয়া মৈত্র। মূলত তাঁরই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই চিররঞ্জনবাবুকে সরিয়ে নতুন সভাপতি করা হল মহুয়া ঘনিষ্ট তরুণ সাহাকে।
যদিও মহুয়া বলেন, “চিরবাবু আমাদের সম্মানীয় নেতা। তাকে প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে রাখা হয়েছে। আমাদের সকলের মাথার উপরে।” আর যা শুনে চিরবাবু শুধু বলেন, “পদে না রাখলেও আমি এমন কিছু বলব না, যাতে দলের কোন ক্ষতি হয়।”
৩০ জুলাই কৃষ্ণনগর পুরসভায় দলের কোর কমিটির মিটিংয়ে করিমপুর ও পলাশীপাড়ার বিধায়করা ব্লক সভাপতি পরিবর্তনের প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাব গৃহীতও হয়। সেই সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয় তেহট্ট-১ ও করিমপুর-২ ব্লককে ভাগ করে দেওয়া হবে। সর্বসম্মতিক্রমে সেই প্রস্তাব গৃহিত হয়।
করিমপুর-২ ব্লককে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত হল করিমপুর- উত্তর। তার সভাপতি করা হল কংগ্রেস থেকে আসা বিধায়কের একান্ত অনুগামী বলে পরিচিত আফাজউদ্দিন বিশ্বাসকে।
আর জেলা সভাপতি গৌরিশঙ্কর দত্তর বিধানসভা তেহট্টের মধ্যে থাকা চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত হল করিমপুর(দক্ষিণ)। এখানে অবশ্য পুরনো ব্লক সভাপতি গৌরিবাবুর ঘনিষ্ট আর্জেল হক মন্ডলই থাকছেন। তেহট্ট-১ ব্লকের সভাপতি সঞ্জয় দত্তকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তেহট্ট শহর এর। আর তেহট্ট গ্রামীন এর দায়ীত্ব দেওয়া হল পলাশীপাড়ার বিধায়ক তাপস সাহার ঘনিষ্ট বিশ্বরুপ রায়কে।
দলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রীতিমতো বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন বিশ্বনাথবাবু। তাপসবাবুর অনুগামীরা ব্লক ফিসে তালা দিয়েছিলেন। বিশ্বনাথবাবুর লোকেরা সেই তালা ভেঙে অফিস দখল করে নেয়। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমরা সেদিন রাস্তায় নেমেছিলাম বলেই তাপস সাহা জিতেছেন।”
১২ অগাস্ট মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণীতে এসেছিলেন। তিনি চলে যাওয়ার পর জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পার্য চট্টোপাধ্যায়। সেখানে সাংগঠনিক বেশ কিছু রদবদলের সিদ্ধান্ত হয়।
হরিণঘাটা পুরসভা হওয়ার পর সেখানে একজন শহর সভাপতি করা হয়েছে। টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি বদলের সিদ্ধান্ত হয়।
জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরিশঙ্কর দত্তের দাবি, “স্থানীয় বিধায়কদের প্রস্তাবমতো দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অনুমতি নিয়েই এই রদবদল করা হয়েছে।’’