মোবাইলে বন্দি হচ্ছে নাচের দৃশ্য। নিজস্ব চিত্র
পুজোর মরসুমে জলসার নামে অশালীন নাচ চলছে তেহট্ট মহকুমার বিভিন্ন এলাকায়। গভীর রাতে রঙচঙে আলোয় ভরা মঞ্চে চটুল গানের সুরে শরীর দোলাচ্ছেন নর্তকীরা। কমবয়সী ছেলেদের ভিড় উপচে পড়ছে মঞ্চের সামনে।
এই ধরনের অনুষ্ঠান চলায় ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। অথচ সে দিকে নজর নেই কারও। সীমান্ত এলাকার গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, যে কোনও পুজো উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে ভোজপুরী গানের তালে স্বল্পবাস তরুণীদের উদ্দাম নাচ চলছে এখন। বিভিন্ন এলাকায় পুজো উপলক্ষে লোক-দেখানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে সন্ধ্যায়। রাত বাড়তেই মঞ্চে উঠছেন স্বল্পবসনা তরুণীরা। হাততালি আর উল্লাসে ফেটে পড়ছে উপস্থিত দর্শকেরা, বিশেষ করে অল্পবয়সীরা।
প্রত্যক্ষদ;শীদের অভিযোগ, রাত যত গভীর হয়, নর্তকীদের পোশাক তত ছোট হতে থাকে। রাত জেগে সেই অনুষ্ঠানে যারা হাজির থাকে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগের বয়স কুড়ি-বাইশের নীচে। যাদের মধ্যে স্কুল ও কলেজের পড়ুয়া প্রচুর।
শ্যামনগরের তন্ময় সরকার বলেন, “এ বছর তো প্রথম নয়, গত বছরেও অনেক গ্রামে এমন অনুষ্ঠান হয়েছে। মঞ্চে এমন নাচ বিহারের কিছ-কিছু গ্রামে হয় বলে আগে জানতাম। কিন্তু এখানেও যে এ সব দেখতে হবে, কোনও দিন ভাবতেই পারিনি।’’
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গিয়ে অজান্তে এই সব নাচের সাক্ষী হয়ে পড়ছেন, পরে অস্বস্তিতে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে আসছেন, এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়। ছেলেমেয়েদের সামনে অস্বস্তিতে পড়ে যাচ্ছেন এঁরা। তাঁদের মতে, উৎসবের নামে এই সব নাচ-গান নতুন প্রজন্মকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি, প্রতিবাদ হওয়াও দরকার। পুলিশ-প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পুলিশের দাবি, গত ক’দিনে যেখানেই এমন নাচ-গানের জলসার খবর পাওয়া গিয়েছে, তারা গিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। এর পরেও কোথাও অনুষ্ঠান হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। বেতাইয়ের বাসিন্দা ও নদিয়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ দিলীপ পোদ্দার আবার এমন অনুষ্ঠানের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েছেন। তিনি বলেন, “সব্বোনাশ! এ সব অশালীন নাচ এখনই বন্ধ করা দরকার। না হলে এই রোগ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। যুবসমাজ অধঃপতনে যাবে। গ্রামের মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অছিলায় আড়ালে এই রকম অনুষ্ঠান কখনই বরদাস্ত করা হবে না।’’ তাঁর আশ্বাস, বিষয়টি সত্যি হলে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলবেন। ওই সব অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের সঙ্গেও কথা বলা হবে।
প্রত্যাশিত ভাবে, রাতের জলসায় অশালীন নাচ-গানের কথা অস্বীকার করছেন অনুষ্ঠান উদ্যোক্তারা। বেতাই বিষ্ণুগঞ্জের সুমন মুণ্ডারির দাবি, “প্রতি বছরই লক্ষ্মীপুজোয় অনুষ্ঠান করা হয়। মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য বাইরে থেকে মেয়েদের নাচের গ্রুপ আনা হয়। কিন্তু গ্রামের মধ্যে কোনও অশালীন নাচ হয় না।” নদিয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) অর্ণব বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে এখনও কোনও অভিযোগ নেই। যদি কোনও অভিযোগ পাই, তবে আয়োজক ক্লাব বা সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’