বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরের পাত্রবাজারে। ছবি: প্রণব দেবনাথ
বৃষ্টি নেই, তাই ইলিশ নেই।
মনখারাপ বাঙালির পাতে তবুও গুটিগুটি পায়ে হাজির হচ্ছে ইলিশের বাচ্চা— যাদের ওজন একশো থেকে দেড়শো গ্রাম। গত দু’দিন ধরে কৃষ্ণনগর শহরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ছোট ইলিশ।
তবে দামে কিন্তু সেই সব ইলিশ খুব একটা পিছিয়ে নেই। তিনশো টাকা কেজি। শুনে পিছিয়ে যাচ্ছেন অনেক ইলিশপ্রেমীই। তাঁদের আক্ষেপ, “জুলাই শেষ হতে চলল। এখনও ইলিশ খেতে পারলাম না। বাজারে তো উঠছেই না!” কেউ-কেউ বলছেন, “প্রমাণ সাইজ়ের ইলিশ না পেয়ে ছোট ইলিশগুলোকে দেখেই লোভ হল। কিন্তু এত দাম দিয়ে খাওয়া যাবে না।”
অন্য বছরে এই সময়ে বাজার উপচে পড়ে ইলিশে। নানা ওজনের নানা দামের ইলিশ নিয়ে পশরা সাজিয়ে বসে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এ বার যেন খরা। দু’চার জন গোটা কয়েক হিমঘরের ইলিশ নিয়ে বসে থাকলেও দাম এত বেশি যে খরিদ্দার মিলছে না। সব মিলিয়ে চরম হতাশ কৃষ্ণনাগরিকেরা। ফলে ছোট ইলিশ খেয়েই দুধের সাধ ঘোলে মেটাতে চাইছেন অনেকে। মাছের বাজারে দাঁড়িয়ে থলি হাতে বছর পঞ্চান্নর দেবদাস ভৌমিক বলছেন, “হোক না ইলিশের বাচ্চা। ইলিশই তো!”
অথচ ছোট ইলিশ ধরা এবং বিক্রি করা নিষিদ্ধ। মৎস্য দফতরের কর্তারা বলছেন, ২৩ সেন্টিমিটারের কম দৈর্ঘ্যের মাছ ধরা ও বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু সাজা দেবে কে? প্রশাসনের নজরদারিই তো নেই! প্রশাসনের কর্তার নাকি জানেনই না যে বাজারে এত ছোট মাছ বিক্রি হচ্ছে। যদিও জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের অনেক কর্তাকেই এই সব বাজারে কেনাকাটা করতে দেখা যায়।
মৎস্য দফতরের কর্তারা অবশ্য রুটিনমাফিক দাবি করে চলেছেন, তাঁরা এখনও কোনও বাজারে হানা না দিলেও বিভিন্ন জায়াগায় প্রচার শুরু করেছেন। জেলার মৎস্য দৎফতরের আধিকারিক রামকৃষ্ণ সর্দার বলেন, “আমরা ঠিক করেছি, প্রথমে বাজারে গিয়ে দোকানিদের বোঝাব, তাঁরা যেন ছোট ইলিশ বিক্রি না করেন। তার পরেও যদি দেখি কেউ বিক্রি করছেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।”
যা শুনে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্ষমতা থাকলে সরকার আগে ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ করুক। সে ক্ষমতা তো নেই। যত আইন ফলানো হচ্ছে তাঁদের উপরে। তবে পাত্রবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারক হালদারের দাবি, “আমরা ব্যবসায়ীদের বোঝাচ্ছি, যাতে তাঁরা এত ছোট ইলিশ বিক্রি না করেন। কথা না-শুনলে কী করব!”