—প্রতীকী ছবি
আসন সমঝোতা সুদূর। তৃতীয় শক্তি হিসেবে আসন্ন বিধানসভায় বাম-কংগ্রেস পরস্পরের হাত কতটা পোক্ত করে ধরবে, তা নিয়েও চূড়ান্ত কোনও আলোচনা হয়নি। তবে দু’পক্ষের শীর্য নেতারা আশাবাদী জোট হচ্ছে এবং তা জোর ধাক্কা দেবে। আর তা নিয়েই কিঞ্চিৎ দ্বিধাবিভক্ত জেলা বামফ্রন্টের মেজ-সেজ শরিকের নিচুতলার কর্মীরা।
২০১৬’র নির্বাচনে হাতে হাত ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ভোট ময়দানে নেমেছিল দু’পক্ষ। কিন্তু সে বার জোট হওয়া সত্ত্বেও লড়াইটা কোথাও ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ কোথাও বা ‘অসহযোগিতা’র নালিশে গড়ায়। ফ্রন্টের বড় শরিক সিপিএম সে বার জেলায় ৪টি আসন পেলেও দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছিল, নিচুতলার বাম কর্মীরা জোটের কার্যকারিতা নিয়ে আঙুল তুলেছিলেন দলের উপরতলার নেতাদের দিকে। আসন্ন বিধানসভা ভোটেও জোট নিয়ে সে আঙুল ফের উঠবে কি না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন বাম শরিকদের মধ্যে। তাঁদের কেউ সরাসরিই বলছেন, ‘‘এখনও সময় আছে, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট থেকে বেরিয়ে আসাই ভাল’’, কারও বা সংশয় কাটছে না। সিপিএমের অঞ্চল কমিটির এক নেতা স্পষ্টই কবুল করছেন, “আমাদের লড়াই বরাবর কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও। নেতারা কি বোঝেন না, তেলেজলে মেশে না!” আরএসপি’র এক নেতা যেমন কোনও রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘শরিকদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে গত বিধানসভা ভোটে সিপিএম ও কংগ্রেসের জোটে বামেদের লাভ কী হয়েছে!’’ এক শরিক নেতা বলেন, “শরিক দলগুলির আত্মমর্যাদা বজায় রেখে এই জোট করা হলে ভাল। না হলে জেলায় বাম ঐক্য ধাক্কা খাবে।”
ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক বিভাস চক্রবর্তী বলেন, “আমরা দলের মতামত জেলা বামফ্রন্টের বৈঠকে বলেছি। জেলায় শরিকদল হিসাবে কোন আসন না পেলে দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে জেলায় যে বাম ঐক্য গড়ে উঠেছে তা আর থাকবে না।” সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক হারাধন দাশ বলেন, “আমরা তো চাইব যেখানে সিপিআই শক্তিশালী সেখানেই লড়াই করতে। তবে মর্যাদা হারিয়ে জেলার নেতা কর্মীরা যদি জোটে থাকতে না চান তা হলে আমরা বাধা দেব না।” আরএসপি গত নির্বাচনে জোটের স্বার্থে বহরমপুর, বেলডাঙা, রেজিনগর ছেড়ে দিয়েছিল। আরএসপি নেতাদের অভিযোগ, আগের নির্বাচনে কার্যত জেলায় শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছিল আরএসপিকে। আরএসপির জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আসন ভাগাভাগি কোন জায়গায় যাচ্ছে দেখা যাক তারপর বলতে পারব আমরা থাকব কি না।”
সিপিএম জেলা সম্পাদক নৃপেন চৌধুরী অবশ্য আশাবাদী, বলেন, “আমরা ঐক্যবদ্ধ। রাজ্যে বামফ্রন্টগত ভাবেই আসন সমঝোতা হবে। সব শরিকের মত নিয়েই জোট হবে। তবে, এ বার কিছুতেই বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হবে না এটাই আমাদের মুখ্য অবস্থান।”
বহরমপুরের কংগ্রেসে বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী জেলা বাম শরিকদের এই মনোভাব সুনেছেন। তিনি বলেন, “এটা লঙ্কাভাগের মতো হবে না। কাকে কোথায় আসন দেবে তা নিজেরাই ঠিক করে নেবে বামফ্রন্ট।’’