পানা সরিয়ে ইছামতী ফের মুখ দেখাচ্ছে

এখন ইছামতীর পারে গেলে অনেকের মুখে এই কথাগুলো শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। গত ১৪ অগস্ট থেকে ইছামতী নদী পরিষ্কার করার কাজ শুরু হয়েছে।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

ধানতলা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০২:৩৬
Share:

ইছামতী: বাঁ দিকে, চলছে সাফাই। ডান দিকে, সাফাইয়ের পরে। নিজস্ব চিত্র

মেঘ নেমে এসেছে নদীর ও পারে।

Advertisement

ঘর থেকে বেরিয়ে নদীর পাড়ে এসে বৃদ্ধ অশোক মণ্ডল দেখেন, কচুরিপানা নেই। টলটলে জলে বাদল মেঘের মুখ দেখা যায়। ঘাড় ঘোরাতেই কী আশ্চর্য, নৌকাও চলছে!

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ধানতলা থানার দত্তপুলিয়া পঞ্চায়েতে নতুনপাড়ায় নিবাস বছর ষাটের অশোকের। ইছামতীর পারে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘অন্তত তিন বছর পর এই দৃশ্য দেখছি। খুব ভাল লাগছে। নদীটার কী অবস্থা হয়েছিল! জল বলতে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছিল না। যে দিকে তাকাতাম, শুরুই কচুরিপানা।”

Advertisement

এখন ইছামতীর পারে গেলে অনেকের মুখে এই কথাগুলো শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। গত ১৪ অগস্ট থেকে ইছামতী নদী পরিষ্কার করার কাজ শুরু হয়েছে। একটি অসরকারি সংস্থার ব্যবস্থাপনায় নদীবন্ধুরা ইছামতীতে নেমে কাজ করছেন। বিভিন্ন এলাকার মানুষকে তাঁরা পারিশ্রমিক দিয়ে কাজে যুক্ত করেছেন। রানাঘাট ২ ব্লকের দত্তপুলিয়া পঞ্চায়েতের নারায়ণপুর থেকে নদী সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এই এলাকা দিয়েই

বাংলাদেশ থেকে ইছামতী এ দেশে ঢুকেছে। দশ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ওই ব্লকেরই আঁইশমালি গ্রাম পঞ্চায়েতের খাগড়াগড় এলাকা পর্যন্ত ইছামতী পরিষ্কারের কাজ চলবে। ইতিমধ্যে শতকরা প্রায় সত্তর ভাগ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। রবিবারও কাজ হয়েছে।

যে সংস্থা কাজটি করাচ্ছে তাদের বক্তব্য, সংস্থার সদস্যেরা নদীপাড়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন তাঁরা কী চাইছেন, সেই তথ্য মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন। বিষয়টি একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত হওয়ার পরে তা দেখে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা আর্থিক সাহায্য করেছে। রানাঘাট ২-এর বিডিও খোকন বর্মণও বলেন, ‘‘একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করলেও তার টাকা জোগাচ্ছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা। আমরা প্রশাসনের তরফে দেখভাল করছি।’’

দত্তপুলিয়ারই নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা, বছর পঞ্চাশের কৌশল্যা বিশ্বাস বলেন, “এখন আর নদীর জলে কাজ করতে কোনও সমস্যা হবে না। কচুরিপানায় ভরে যাওয়ায় স্নান করা যাছিল না। মশার উপদ্রবে ঘরে টেকা যাচ্ছিল না। তার উপরে সাপখোপের উপদ্রব তো আছেই। খুব ভয় লাগত। সে সব উপদ্রব আর থাকবে না।”

নতুনপাড়া অশোক বলেন, “সেই কোন ছোটবেলায় এই নদীতে স্নান করেছি। বন্ধুদের সঙ্গে সাঁতার কেটেছি। নৌকা নিয়ে খেলা করেছি। গত কয়েক বছর ধরে নদীর অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। খুব ভাল লাগছে এখন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement