Laptops

লকডাউনে পোয়াবারো ল্যাপটপের, বিক্রি বেড়ে দ্বিগুণ

লকডাউনের প্রথম পর্বে, ধারণা করা গিয়েছিল স্মার্টফোনেই মাস দেড়েকের নিভৃতবাসের চাপ সামলে দেওয়া যাবে। ফলে মার্চ এবং এপ্রিলে দেদার স্মার্ট মোবাইল বিকিয়েছে।

Advertisement

বিদ্যুৎ মৈত্র

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০২:১২
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রযুক্তিকে একেবারে পরিবারের হেঁশেলে টেনে এনেছে কোভিড। যে সব বৈদ্যুতিন যন্ত্রের বাহারি চেহারা এত দিন শহরের চকচকে শো-রুমে কাচের আড়াল থেকেই দেখতে অভ্যস্থ ছিলেন আম-মানুষ, ঘরে বসে অফিস করা’ বা ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর জাঁতাকলে পড়ে সেই সব অমোঘ বৈদ্যুতিন যন্ত্র এখন আটপৌরে খাটে ঠাঁই করে নিয়েছে! তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা আপন করে নেওয়ার বাসনা দূরের, কারণ সরকারি বা বেসরকারি সংস্থাগুলি তাদের কর্মীদের হাতে করোনার আপৎকালীন আবহেই তুলে দিয়েছে সে সব। শুধুই অফিস নয়, শিক্ষাঙ্গনে ই-লার্নিংয়ের চাপে পড়ে পড়ুয়া থেকে শিক্ষক সবাইকেই শিক্ষক থেকে আম পড়ুয়া বাধ্য হয়ে কিনে ফেলছেন দামি মোবাইল সেট। ছাপোষা মানুষের কাছে আকাশ ছোঁয়া সেই সব বৈদ্যুতিন যন্ত্রও কিস্তির টাকায় এসে ঢুকেছে ঘরে।

Advertisement

লকডাউনের প্রথম পর্বে, ধারণা করা গিয়েছিল স্মার্টফোনেই মাস দেড়েকের নিভৃতবাসের চাপ সামলে দেওয়া যাবে। ফলে মার্চ এবং এপ্রিলে দেদার স্মার্ট মোবাইল বিকিয়েছে। গ্রামের সাধারণ আটপৌরে মানুষ থেকে দূরের শহরে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিক— সকলেই কিনতে কিছুটা বাধ্য হয়েছিলেন স্মার্টফোন। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে, বোঝা গিয়েছে, নিছক ফোনের চৌহদ্দিতে নিভৃতবাসের কাজ সামাল দেওয়ার নয়। ফলে ধাপে ধাপে বেড়েছে ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপ, পামটপ কিংবা আইপ্যাডের কেনাকাটা।

মাস ঘোরার পরে বন্ধ পঠনপাঠনও শুরু হয়েছে ইন্টারনেটে। তাই স্কুল থেকে কলেজ— সব পড়ুয়ারই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে স্মার্টফোন। সকলে না পারলেও যে ছাত্রের দশম শ্রেণির পঠনকালেই স্মার্টফোনের প্রয়োজন ছিল না, ধার-দেনা করে তাকেও কিনতে হয়েছে নিদেনপক্ষে হাজার আটেক টাকা খরচ করে একখানি স্মার্টফোন। বহু শিক্ষককেও বলতে শোনা গিয়েছে, জমানো টাকা ভেঙে শেষতক কিনতে হল দামি স্মার্টফোন। আর যাঁরা পারছেন, তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যকে স্বাগত জানিয়ে ছোট ফোনের বদলে আরও বড়, কিংবা ডেস্কটপের জায়গায় ছিমছাম ল্যাপটপে উত্তরণ ঘটিয়েছেন নিজেদের। চালতিয়ার বাসিন্দা বীণা সাহা পাল যেমন, বলছেন, “সব সময় মোবাইলের ছোট স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ছেলের ক্লাস করতে কষ্ট হচ্ছে। তাই অসুবিধা হলেও ডেস্কটপ কিনে দিতে বাধ্য হয়েছি।” বহুজাতিক সংস্থার কর্মী খাগড়ার বাসিন্দা অমিত কুণ্ডু প্রথম দিকে ১০ ইঞ্চির ট্যাবে কাজ চালিয়ে নিচ্ছিলেন। এখন তাঁর বক্তব্য, “একে টাচ স্ক্রিন, তায় ছোট, টানা তিন মাস ধরে কাজ করা যথেষ্ট কষ্টের। তাই ল্যাপটপ কিনতে বাধ্য হলাম।” এই ধরনের চাহিদার হাত ধরেই জেলার দোকানগুলিতে রমরমিয়ে বিক্রি বেড়েছে কম্পিউটারের। বিকিকিনি চলছে ধার-বাকিতেও। তবে জেলার ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘‘ওয়েব ক্যামেরার সুবিধা থাকায় ডেস্কটপের তুলনায় ল্যাপটপের বিক্রি বেড়েছে।’’ স্থানীয় একটি শো-রুমের মালিক, সঞ্জীব পাঠক বলছেন, “আগে মাসে ৩০টি কম্পিউটার বিক্রি হত, গত দেড়-মাসে ৭০-৮০টি করে বিক্রি হচ্ছে।” রঘুনাথগঞ্জের এক শো-রুম মালিক কৌশিক সিংহের কথায়, “দশ থেকে বারো লাখ টাকা লাভ হয়েছে এই লকডাউনে কম্পিউটার বিক্রি করে।” বৈদ্যুতীন যন্ত্রের কারবারি সৈকত পাল বলছেন, “এই সুযোগে কলকাতার ব্যবসায়ী যাদের বেশি বিনিয়োগ করবার ক্ষমতা আছে তাঁরা বাজার থেকে বেশি পরিমাণে কম্পিউটারের বিভিন্ন পার্টস কিনে রাখছেন।
ফলে ছদ্ম-সঙ্কট।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement