ফের উদ্ধার ৬০০ বোমা

এত বোমা আসছে কী ভাবে, উঠছে প্রশ্ন

ফের সেকেন্দ্রা থেকে উদ্ধার হল ৬০০টি তাজা বোমা! এক মাসের মধ্যে এই নিয়ে তৃতীয়বার। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অনুমান, বিধানসভা নির্বাচনের আগে এলাকা পুনর্দখল করতে ওই বোমা মজুত করা হচ্ছিল। সোমবার দুপুরে গ্রামের দু’টি বাড়ির উঠোন ও সংলগ্ন এক বাঁশ বাগানের মাটি খুঁড়ে এই বিপুল সংখ্যায় বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। বোমাগুলি ৬টি প্লাস্টিকের পাত্রে সযত্নে পোঁতা ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৫ ০০:৫৩
Share:

নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে বোমাগুলি

ফের সেকেন্দ্রা থেকে উদ্ধার হল ৬০০টি তাজা বোমা! এক মাসের মধ্যে এই নিয়ে তৃতীয়বার।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অনুমান, বিধানসভা নির্বাচনের আগে এলাকা পুনর্দখল করতে ওই বোমা মজুত করা হচ্ছিল।
সোমবার দুপুরে গ্রামের দু’টি বাড়ির উঠোন ও সংলগ্ন এক বাঁশ বাগানের মাটি খুঁড়ে এই বিপুল সংখ্যায় বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। বোমাগুলি ৬টি প্লাস্টিকের পাত্রে সযত্নে পোঁতা ছিল। পুলিশের সন্দেহ, গ্রাম দখলের রাজনীতি শুরু করতেই সেকেন্দ্রায় এই সব বোমা মজুত করা হয়েছিল। যাঁদের জমি থেকে এই বোমা উদ্ধার হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বোমা উদ্ধারের সময়ে কোনও পুরুষ মানুষকে বাড়িগুলিতে পাওয়া যায়নি। বাড়ির মহিলারা এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে মুখ খোলেননি।
আশ্চর্যের বিষয়, গত এক মাসে তিন তিন বার বিপুল সংখ্যক বোমা উদ্ধারের পরেও পুলিশ এখনও কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। এর ফলে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানেননি পুলিশ সুপার সি সুধাকর। তিনি বলেন, ‘‘উদ্ধার হওয়া বোমাগুলি পদ্ধতি মেনে জলে ফেলে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। বাড়ির মালিক-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে।’’ গোলমালের আশঙ্কায় পুলিশ ক্যাম্প বহাল রাখা হয়েছে সেকেন্দ্রায়।
গত ৫ জুন বোমা বানানোর সময়ে একটি বাড়িতে হানা দিয়ে পাশে ডাঁই করে রাখা প্রায় ৩০০টি তাজা বোমা উদ্ধার করে রঘুনাথগঞ্জের পুলিশ। উদ্ধার হয় বোমা বানানোর বারুদও। এর আগে গত ২ মে ইমামনগর গ্রামের এক জঙ্গলের মধ্যে থেকে দু’টি প্লাস্টিকের পাত্রে রাখা ১৫০টি তাজা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার মাটি খুঁড়ে যাঁদের বাড়ি থেকে এই বোমা উদ্ধার হয়েছে এলাকায় তাঁরা সিপিএম সমর্থক বলে পরিচিত। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সাহাদাত হোসেন এ প্রসঙ্গে জানান, গিরিয়া ও সেকেন্দ্রা পঞ্চায়েতের সবক’টি গ্রামই এখন তৃণমূলের দখলে। সিপিএমের কিছু সমর্থক গ্রামে থাকলেও তাঁদের এখন বোমা বানানোর মতো সাহস নেই। তাঁর দাবি, ‘‘যাঁদের উঠোন খুঁড়ে বোমা মিলেছে, তাঁরা সকলেই তৃণমূল করেন বলে জানি। সিপিএমের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই।’’

Advertisement

তৃণমূলের রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লকের সভাপতি এমাজুদ্দিন বিশ্বাসের কথায়, ওই দু’টি পঞ্চায়েতের সব সদস্যই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এলাকার পরিবেশও এখন শান্ত। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সুস্থ পরিবেশকে নষ্ট করতে কংগ্রেস ও সিপিএম নেতৃত্ব হাত মিলিয়েছে। তাঁদের মদতে এলাকার দখল নিতে দুষ্কৃতীরা বোমা বানাচ্ছিল।’’ যাঁদের বাড়ি থেকে বোমা উদ্ধার হয়েছে, তাঁরা সিপিএম করেন বলেও তাঁর দাবি। এ দিনের ঘটনায় অভিযুক্তেরা সিপিএমের কর্মী বলে জানিয়ে কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য প্রকাশ সাহার মত, ‘‘ওরা কু-মতলবেই বোমা মজুত করেছিল। কাছেই বাংলাদেশ সীমান্ত। এখানে বোমা বানিয়ে তা বাংলাদেশে পাচার করা হত না, তা কে বলবে?’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, এই এলাকায় বোমা উদ্ধারের ঘটনা নতুন নয়। এক সময় সেকেন্দ্রা ও গিরিয়ায় এলাকা দখল নিয়ে লড়াই ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। অতীতে হাজার হাজার বোমাও উদ্ধার হয়েছে। বাম জামানায় সীমান্ত ঘেঁষা এই এলাকা ছিল সিপিএমের দখলে। গিরিয়া ও সেকেন্দ্রা দু’টি পঞ্চায়েতই সিপিএমের দখলে ছিল। বহু কংগ্রেস সমর্থক সে সময়ে গ্রামছাড়া ছিলেন। পরে প্রণব মুখোপাধ্যায় জঙ্গিপুরে সাংসদ নির্বাচনে দাঁড়ালে এলাকার দখল নেয় কংগ্রেস। এরপরেই ওই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করে কংগ্রেস। এলাকা ছাড়া হন সিপিএম সমর্থকরা।

Advertisement

জঙ্গিপুর শহর লাগোয়া ওই এলাকা এখন তৃণমূলের গড় বলে পরিচিত। স্থানীয় একটি সূত্রে খবর, এই দুই পঞ্চায়েতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ইলিয়াস চৌধুরী। দোর্দণ্ডপ্রতাপ ইলিয়াস চৌধুরী কখনও সিপিএম, কখনও কংগ্রেস করেছেন। যখন যে দিকে ভিড়েছেন, এলাকার দখলও তখন থেকেছে তাঁর দিকে। গত বছরের ২৯ জুন তৃণমূলে যোগ দেন ইলিয়াস। তার পরেপরেই দু’টি পঞ্চায়েতের প্রায় সব সদস্য যোগ দেন তৃণমূলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement