চড়কে সন্ন্যাসীদের কসরতই মুখ্য আকর্ষণ

চার হাজারেই পিঠে বড়শি গেঁথে শূন্যে

শহরের উত্তরে যোগনাথ, দক্ষিণে আলোকনাথ, পুবে হংসবাহন আর পশ্চিমে বুড়োশিব। এঁরা যেন দিগ্‌দেবতা। আর আছেন বালকনাথ, বাণেশ্বর, দণ্ডপাণি ও পলেশ্বর।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ০৫:২৩
Share:

ঝাঁপ-বাণ: বেলডাঙার মণ্ডপতলায় এটাই গাজনের সবথেকে বড় আকর্ষণ। প্রতি বছর এটা দেখতেই দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসেন। বসে মেলা। ভিড় সামলাতে মোতায়েন থাকে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।

চৈত্রের ক’টা দিন শিবনিবাস হয়ে ওঠে চৈতন্যধাম নবদ্বীপ।

Advertisement

শহরের উত্তরে যোগনাথ, দক্ষিণে আলোকনাথ, পুবে হংসবাহন আর পশ্চিমে বুড়োশিব। এঁরা যেন দিগ্‌দেবতা। আর আছেন বালকনাথ, বাণেশ্বর, দণ্ডপাণি ও পলেশ্বর।

শিবের বিয়ে, গাজন, নীল, চড়ক নিয়ে আড়ম্বর তো আছেই। সংক্রান্তির পাঁচ দিন আগে থেকে শুরু হয়ে যায় সাত শিবের গাজন। শুধু কি নবদ্বীপ? নদিয়ার শিবনিবাস থেকে রানাঘাট, মুর্শিদাবাদের কান্দি থেকে বেলডাঙা সর্বত্রই ভক্তেরা সন্ন্যাসব্রত পালন করেন। পরনে ধুতি, গলায় উত্তরীয়, রুদ্রাক্ষের মালা। হাতে কমণ্ডলু। খালি পা। মুখে শিবভজনা। সঙ্গে গাজনের ঢাকের বোল।

Advertisement

মুর্শিদাবাদে ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে কুমারপুর, সুজাপুর, বেলডাঙা, বাঁশচাতর, আনন্দনগর, মানিকনগর, কেদারচাঁদপুর বা সর্বাঙ্গপুরে উৎসব শুরু হয় ২৫ চৈত্র। সকালে ভক্তের দল কাঠের ‘বাণেশ্বর’ নিয়ে ভিক্ষায় বেরোন। সারাদিন ঘুরে রাতে মন্দিরে ফেরা। রাতভর বানফোঁড়া, কাঁটাঝাঁপ, মশাল— জানান চৈতন্যপুরের ভক্ত সঞ্জয় ঘোষ বা বেলডাঙার দুর্যোধন মণ্ডলেরা। কান্দি, সালার, শিমুলিয়া, খাঁড়েরা, কাগ্রাম, ভরতপুরে রয়েছে একাধিক প্রাচীন শিবমন্দির। ২৮ চৈত্র এখানে জাগরণের রাত। শিবমন্দিরে রাতভর উৎসব। পরের দিন শিবের দোলযাত্রা। বিভিন্ন মন্দির থেকে মুখে সিঁদুর মেখে শ’য়ে-শ’য়ে ভক্ত কাঁধে বা পালকিতে করে শিব নিয়ে যান উদ্ধারণপুরে গঙ্গার ঘাটে। ৩০-৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পাড়ি দিতে হয় রুদ্রদেব, মটুকেশ্বর বা মদনেশ্বরকে। নীলের দিন সকালে বেরিয়ে পড়েন কান্দির রুদ্রদেব। নানা এলাকা ঘুরে দুপুরে জিরোন বিশ্রামতলায়। বিকেলে ফের যাত্রা। হোমতলায় গিয়ে সারারাত যাগযজ্ঞের পরে ভোরে ফেরেন নিজের মন্দিরে।

চড়কের মেলায় গাজন সন্ন্যাসীদের কসরত মুখ্য আকর্ষণ। নদিয়ায় ইদানীং দেখা মিলছে এমন কিছু সন্ন্যাসীর যাঁরা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন চড়কের মেলায় নানা কসরত দেখাচ্ছেন। এঁদের বাড়ি রানাঘাটের নতুনগ্রামে। বছরভর ওঁরা নানা রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন ওঁরা। গাজনের কিছু দিন আগে ফেরেন। এঁদের জনাদশেক আছেন পিঠে বঁড়শি ফুটিয়ে শূন্যে ঘুরতে ওস্তাদ। ‘রেট’ চার হাজার টাকা। আরও চল্লিশ জন যাঁরা বুকে, পিঠে, জিভে লোহার শিক গেঁথে ঘুরে বেড়ান, তাঁরা নেন এক হাজার করে।

আজ, শনিবার শিবনিবাসে চড়কের আসর মাতাবেন নতুনগ্রামের সুরজিৎ সর্দার, সুজিত সর্দারেরা। তাঁদের কথায়, “এই চড়কের টানেই আমরা বছর শেষে বাড়ি ফিরি। কিছু বা়ড়তি উপার্জনও হয়। প্রথম-প্রথম কষ্ট হত। এখন সয়ে গিয়েছে।”

...চরণের সেবা লাগি মহাদেব!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement