চোরা পথে ভারতে ঢুকছে ইলিশ। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশি ইলিশের একটি বড় অংশের কেনাবেচা হয় ওই দেশের ইলিশের পাইকারি বাজার চাঁদপুর বড়স্টেশন ঘাটে। গত ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পাইকারি ইলিশ বাজারে ১ কেজি কিংবা তার বেশি ওজনের ইলিশের কেজি প্রতি দর ছিল ১০০০-১২০০ টাকা। খুচরো বাজারে ওই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকার আশপাশে। বাংলাদেশের খুচরো ইলিশ ব্যবসায়ীদের দাবি, আবহাওয়া অনুকূল না হওয়ায় ইলিশের পর্যাপ্ত জোগান নেই। তাই দামও ঊর্ধ্বমুখী। ট্রলার মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি কিন্তু ভিন্ন। মালিক ও আড়তদারদের ফাঁকি দিয়ে বাড়তি মুনাফা পকেটে ভরতে মাঝ নদীতেই পাচারকারীদের কাছে কম পয়সায় ইলিশ বিক্রি করে দিচ্ছেন মৎস্য শিকারীরা। কার্যত পাইকারি মূল্যের অর্ধেক দামে মাঝ নদীতে ইলিশ কিনে ভারতীয় পাচারকারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে কেজি প্রতি ১২০০-১৪০০ টাকা দরে। কাঁটাতার পেরোলেই ইলিশের প্রমাণ সাইজের পদ্মার ‘কুলীন’ ইলিশের দাম হয়ে যাচ্ছে কেজি প্রতি ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা। সেই কারণেই বাংলাদেশের বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও কাঁটাতার পেরিয়ে টনটন ইলিশ পাচার হচ্ছে ভারতে।
ভারতীয় বাজারে পদ্মার ইলিশের ব্যাপক চাহিদা। আবহাওয়া অনুকূল না হওয়ায় ডায়মন্ড হারবার, দিঘা-সহ একাধিক উপকূলীয় এলাকায় এ বছর সে ভাবে ইলিশের দেখা মেলেনি। নদীর মোহনার সুস্বাদু ইলিশ বাজারে নেই বললেই চলে। রাজ্যের চাহিদা মেটাতে মহারাষ্ট্র থেকে বাংলায় ঢুকছে নোনা জলে ইলিশ। বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রফতানিতে সরকারি ভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাড়ছে পাচার। সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে প্রায় প্রতি দিনই ধরা পড়ছে বাংলাদেশি ইলিশ পাচারের চক্র।
বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৭ ও ৯ সেপ্টেম্বর মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার সীমান্ত এলাকা দিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশি ইলিশ পাচারের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন দুই পাচারকারী। উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৫০০ কেজি বাংলাদেশি ইলিশ, যার বাজারমূল্য অন্তত ছ’লক্ষ টাকা! ধৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, মাঝ নদীতে বাংলাদেশি জেলেদের কাছ থেকে পাচারকারীরা অল্প দামে ইলিশ কিনে নিয়ে নদীপথে সীমান্তে পৌঁছয়। কখনও জলপথে, কিংবা কখনও সড়ক পথে কাঁটাতার পেরিয়ে দ্বিগুণ দামে ভারতীয় বাজারে বিক্রি হয় সেই ইলিশ।
দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি (বিএসএফ) একে আর্য বলেন, ‘‘গোপন সূত্রের খবরের ভিত্তিতে নদীপথে তল্লাশি চালিয়ে ১১৮ কেজি ইলিশ বাজেয়াপ্ত হয়। অন্য ঘটনায় জল পথে ৩২৫ কেজি ইলিশ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওই ইলিশ অবৈধ ভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আনা হচ্ছিল।’’