লালগোলা হাসপাতালে ভাঙচুরের পরে। —নিজস্ব চিত্র
চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ তুলে রোগীর বাড়ির লোকজন বুধবার সকালে লালবাগ মহকুমা হাসাপাতালে তাণ্ডব চালায়। হাসপাতালের বিভিন্ন ঘরের দরজা, জানালা, টেবিল, চেয়ার, আলমারি ও সিলিং ফ্যান ভেঙে দেয় ওই ক্ষিপ্ত জনতা। উত্তেজিত ওই জনতার হাতে মার খেয়েছেন এক নার্স- সহ চার জন স্বাস্থ্যকর্মী। দুষ্কৃতীদের ছোড়া ইট এসে লাগে রিঙ্কু রায় নামে ওই নার্সের গায়ে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চার জনকে আটক করেছে। মুর্শিদাবাদের আইসি আশিস দে বলেন, ‘‘হাসপাতালের সুপার এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই মতো তদন্ত চলছে। আটক ব্যক্তিদের জেরা করা হচ্ছে।’’
মুর্শিদাবাদ থানা এলাকার রঞ্জিতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জামাল শেখ (২৫) মঙ্গলবার দুপুরে পেটে যন্ত্রণা নিয়ে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন। স্ত্রী নাসিমা বিবি জামালকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক দেখার পর স্বামীকে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। তারপর থেকে আর কোনও চিকিৎসক আমার স্বামীকে ছুয়েও দেখেননি। নার্সরা রাত ৮টা নাগাদ স্যালাইন দেন। রাতে সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁরাই ইঞ্জেকশন দেন। চিকিৎসা বলতে ওইটুকু। পরদিন সকালে হাসপাতালে গিয়ে শুনছি, রাত ৩টেয় স্বামী মারা গিয়েছে।’’ মৃত্যুর খবর শুনে রঞ্জিতপুর ও পাশের গ্রাম থেকে শ’ খানেক উত্তেজিত যুবক হাসপাতালে ঢোকে। টিবি ইউনিট, মেল ওয়ার্ড, ওয়ার্ড মাস্টারের ঘর, আউটডোর ও সুপারের ঘরের সামনে ভাঙচুর চালায় তারা। পরে পুলিশ এসে ওই যুবকরা পালায়।
বছর চারেক থেকে ওই হাসপাতালে স্থায়ী কোনও সুপার নেই। সুপারের পদ সামলাচ্ছেন লালবাগ মহকুমার এসিএমওএইচ নীলাঞ্জন দস্তিদার। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে নীলাঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘ডায়েরিয়া নিয়ে ওই ব্যক্তি হাসপাতালে আসেন। পরে চিকিৎসদের ধারণা হয়, রোগীর খাদ্যনালীতে খাদ্য আটকে রয়েছে। একজন সার্জেন তাঁকে পরীক্ষাও করেন। তখন রোগীর বাড়ির লোকজন হাসপাতালে ছিলেন না। চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ সঠিক নয়।’’ কিন্তু অন্যান্য রোগীদের অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য কথা বলছে। ভগবানগোলার কানাপুকুর গ্রামের তাজমল শেখও পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তাঁর বিবৃতির সঙ্গে সুপারের দাবি মিলছে না। তিনি বলেন, ‘‘বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় জামাল খুব ছটপট করছিল। নার্সরা তাঁর হাতা-পা বিছানার সঙ্গে বেঁধে স্যালাইন দেয় রাত ৮টা নাগাদ। বেশি রাতে একজন নার্স তাকে ইঞ্জেকশন দেন। কোনও চিকিৎসকের গেখা মেলেনি। ভোরে জামাল মারা যায়।’’ ঘটনার তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গড়েছেন সুপার। আর ভাঙচুর প্রসঙ্গে সুপার জানান, আগে হাসপাতাল চত্বরে স্থায়ী পুলিশ পিকেট ছিল। বছর দশেক আগে তা উঠে গিয়েছে। তার বদলে নিরাপত্তার জন্য রয়েছেন ৭ জন বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী। তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।