রোজ কাচা চাদর চাই। এক-এক দিন এক-এক রঙের চাদর। কোনও রোগীকেই যেন এক চাদরে দু’দিন শুতে না হয়। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের জন্য এই মর্মে নির্দেশ এসেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবন থেকে। যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়িত করতেও বলা হয়েছে।
সরকারি হাসপাতালের বিছানায় চাদর নিয়ে রোগী বা তাঁদের বাড়ির লোকের অভিজ্ঞতা এমনিতে ভয়াবহ। কাচা চাদর পাওয়া তো দূর অস্ত্, বহু ক্ষেত্রে চাদরই মেলে না বলে অভিযোগ। বাড়ি থেকে আনা চাদর বিছিয়ে শুতে হয় রোগীকে। এ নিয়ে হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে রোগীর বাড়ির লোকেদের বাগবিতণ্ডাও বেধে যায়। অপরিচ্ছন্ন চাদর থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ঘটনা তো হামেশাই ঘটে।
আর সেই কারণেই সরকারি হাসপাতালে প্রতি দিন চাদর পাল্টে দেওয়ার ব্যাপারে তৎপর হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। যাতে কোনও ভাবেই আগের দিনের চাদর পেতে রাখা না যায়, তার জন্য সপ্তাহের সাত দিনে সাত রঙের চাদর ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে রং। বলা হয়েছে— সোমবার গাঢ় গোলাপী, মঙ্গলবার রয়্যাল ব্লু, বুধবার হালকা বাদামি, বৃহস্পতিবার সবুজ, শুক্রবার সাদা, শনিবার আকাশি ও রবিবার হলুদ চাদর ব্যবহার করতে হবে।
কিন্তু এই চিঠি হাতে পেয়ে কার্যত বিড়ম্বনায় জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। সদর থেকে ব্লক স্তরের হাসপাতালের সুপারদেরও কপালে ভাঁজ পড়েছে। কেননা সরকার চাদর কেনার টাকা দেবে বলে জানানো হলেও বছরভর সেগুলি কাচাকুচি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনও টাকা বরাদ্দ হবে কি না তা নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে বলা হয়নি।
এক গ্রামীণ হাসপাতাল সুপারের কথায়, “উদ্যোগটা খুবই ভাল। এতে আর ফাঁকি দেওয়ার জায়গা থাকবে না। কিন্তু এই নির্দেশ সারা বছর ধরে পালন করতে গেলে যে রকম পরিকাঠামো ও টাকা প্রয়োজন, তা আছে কী? টাকা কোথা থেকে আসবে, সেটা আগে পরিষ্কার হওয়া দরকার।”
কৃষ্ণনগরের জেলা হাসপাতালে এখন শয্যাসংখ্যা সাতশো। তার মানে প্রতি দিন সেই নির্দিষ্ট রঙের সাতশো চাদর ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে লাগবে ৪৯০০টি চাদর। প্রাথমিক বরাদ্দ থেকে সেই হাজার পাঁচেক চাদর নয় কিনে ফেলা গেল, কিন্তু ফি সপ্তাহে অত চাদর কাচতে হবে যে! হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চাদর কাচিয়ে আনতে হয় বাইরে থেকে। প্রতিটি চাদর কাচাতে ন্যূনতম ৫-৬ টাকা করে খরচ পড়বে। অর্থাৎ পাঁচ হাজার চাদরের জন্য সপ্তাহে পঁচিশ হাজার টাকা করে লাগবে। তা হলে গোটা জেলার জন্য বছরে অঙ্কটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, বোঝাই যাচ্ছে।
টাকা ছাড়াও যে আর একটি প্রশ্ন বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে তা হল: প্রতিদিন এত কাচা চাদর এনে দায়িত্ব নিয়ে বদলে দেবে কে? কারাই বা আগের দিনের চাদর হিসেব মিলিয়ে কাচতে দেবে? প্রায় প্রতি হাসপাতালেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। যাঁরা আছেন, তাঁদেরও একটা অংশের আবার কাজের চেয়ে অকাজের প্রতি আগ্রহ বেশি। তবে নির্দেশ যখন এসেছে, তা পালনও যে করতে হবে সেটা সকলেই বুঝছেন। মুখ্য স্বাস্থ আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “আশা করি কিছু দিনের মধ্যে নির্দেশ বাস্তবায়িত করতে পারব।”