পরিচর্যায় ব্যস্ত। নিজস্ব চিত্র
দিনভর ব্যস্ত থাকেন পুলিশের ডিউটিতে। আর বাকি সময়টুকু সবুজ গাছের পরিচর্যা করে কাটান।
তিনি রাজ্য পুলিশের এএসআই ঋত্বিক সরকার।
বর্তমানে যখন রাস্তা তৈরি বা উন্নয়নের নামে চারপাশে নির্বিচারে গাছ কাটা চলছে, তখন তিনি উল্টো পথে হেঁটে একের পর এক গাছ লাগিয়ে চলেছেন। গত দশ বছরে নিজের পয়সা খরচ করে প্রায় এক লক্ষ গাছ লাগিয়েছেন পুলিশের ওই অফিসার। ডিউটির সময়টুকু বাদে দিনের বাকিটা সময় তিনি গাছ লাগানো, আগাছা পরিষ্কার, গাছে মাটি, জল বা সার দেওয়ার কাজেই ব্যস্ত থাকেন। প্রয়োজনে গাছে কীটনাশক প্রয়োগ করেন।
বর্তমানে ওই অফিসার সীমান্তবর্তী হোগলবেড়িয়া থানায় কর্মরত। থানায় গিয়ে দেখা গেল, পুলিশের পোশাক পরেই থানায় লাগানো গাছের গোড়ায় জল দিচ্ছেন ঋত্বিক। ছেঁটে দিচ্ছেন বেড়ে যাওয়া গাছের ডাল।
মুর্শিদাবাদের ঋত্বিক বহরমপুর কমার্স কলেজ থেকে পাশ করে ২০০০ সালে রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদে কাজ শুরু করেন। প্রথমে ব্যারাকপুরে ও পরে ২০০৩ সাল থেকে তিনি নদিয়া জেলায় কোতোয়ালি, তাহেরপুর, থানারপাড়া, শান্তিপুর ও হোগলবেড়িয়া থানায় কাজ করছেন। ২০১০ সালে পদোন্নতি হয়ে বর্তমানে এএসআই পদে রয়েছেন। জানালন, সেই বছর থেকেই তিনি প্রতি বছরে প্রায় দশ হাজার করে গাছ লাগাচ্ছেন।
তাঁর লাগানো বড় গাছের মধ্যে দেবদারু, পেয়ারা, নারকেল যেমন আছে, তেমনই রয়েছে গুল্ম জাতীয় গাছও। যেমন, ইয়োলো হেজ কিংবা চায়না টগর। গাছের চারা কেনার পাশাপাশি পুরনো গাছ থেকে কলম বা প্রজনন করেও তিনি নতুন চারা লাগান। আবার, ওই গাছের চারা বিলি করেন স্থানীয়দের মধ্যেও।
৪৩ বছরের ঋত্বিক এ দিন গাছের পরিচর্যা করতে করতে বলেন, “গাছ লাগানোর টান ছোটবেলা থেকেই ছিল। বাড়ির সামনে সামান্য জমিতেই বিভিন্ন গাছ লাগাতাম। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে ব্যাপক ভাবে গাছ লাগানোর সুযোগ তখন হয়নি।’’
থানায় মরসুম অনুযায়ী বেগুন, পটল, ঢ্যাঁড়শ, কপি, শসার মতো নানান আনাজও চাষ করেন ওই পুলিশকর্মী। বর্তমানে তাঁর বাড়িতে পাঁচ কাঠা জমিতে আম, নারকেল পেয়ারার বাগান করেছেন। হোগলবেড়িয়া থানার ওসি কম্পটন রায় বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় গাছ কেটে ফেলায় যখন পরিবেশবিদরা চিন্তিত, তখন ঋত্বিকবাবুর এই প্রচেষ্টা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।”