মিলেমিশে পুজো। তেহট্টে। নিজস্ব চিত্র
গত কয়েকটা দিন এতটুকু ফুরসত পায়নি তারা। ঠাকুর আনা, বাজার করা থেকে আলপনা দেওয়া, সরস্বতী পুজোর সব ঝক্কি সামলাতে হয়েছে তাদের। অন্য সহপাঠীরা সব সময় পাশে ছিল ঠিকই। কিন্তু তাদের দায়িত্ব ছিল সব চেয়ে বেশি।
বুধবার পুজোর দিনেও তাই সকাল থেকে ব্যস্ত ছিল লাখুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির সালমা ও নুরজাহান। সাজগোজ করে কাজের এক ফাঁকে পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছে, ফুল দিয়েছে বাগদেবীর চরণে। সম্প্রীতির একই রকমের ছবি দেখা গিয়েছে তেহট্টের শ্যামনগরের চন্দ্রনাথ বসু অনাথ আশ্রমে। ধর্মের বেড়া ভেঙে সেখানেও পুজোর আনন্দে সামিল হয়েছে সকলে।
আশ্রম সূত্রে জানা গিয়েছে, খুদেরা নিজেদের উদ্যোগে পুজো করেছে। ওই অনাথ আশ্রমে ২৩ জন ছাত্র থাকে। তারাই পড়াশোনার ফাঁকে প্যান্ডেল তৈরি করেছে, আবার পুজোর আগের দিন সকলে একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সরস্বতী প্রতিমা এনেছে। খুদেদের তৈরি সম্প্রীতির আবহে খুশি আশ্রম কর্তৃপক্ষ থেকে স্থানীয় মানুষজন। পুজোর কাজ থেকে পুষ্পাঞ্জলি— মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছেন নাড়ুগোপাল বিশ্বাস, সৌরভ শর্মা, মানজুর হক উকিল, আব্দুস কালাম শেখ, ইশা মণ্ডলেরা।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আব্দুস বলে, ‘‘আমরা সবাই অনেক আগে থেকে পুজোর প্রস্তুতি নিয়েছি। পরিশ্রম করে প্যান্ডেল করেছি এবং সবাই মিলে আনন্দ করে প্রতিমা এনেছি। সকালে উপোস করে অঞ্জলি দিয়ে প্রসাদ খেয়েছি। খুব আনন্দ হয়েছে।’’
লাখুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সালমা বলে, ‘‘ছোটবেলা থেকে শিখেছি, উৎসবে কোনও ভেদাভেদ নেই। এর আগের স্কুলেও তো আমরা পুজোয় যোগ দিয়েছি। এখনও সেটাই করছি।’’
অন্য দিকে, কালীগঞ্জের বড়কুলবেড়িয়া গ্রামের স্কুলে অধিকাংশ পড়ুয়াই মুসলিম। দীর্ঘ দিন ধরেই সেখানে সরস্বতী পুজো হয়ে আসছে। এখানেও এ দিন যেমন পুজোর ফুল আনতে বেথুয়াডহরি ছুটেছে স্কুলের ছাত্র আলাউদ্দিন, তেমনই পুজোর বাজার করতে দেখা গিয়েছে সানোয়ারকে। ওই স্কুলের শিক্ষক কবিরউদ্দিন শেখের কথায়, ‘‘আমাদের স্কুলে বিভাজন নেই। সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করি। এটাই তো আমাদের সংস্কৃতি।’’
চাকদহের জাগুলি নেতাজি বিদ্যামন্দিরেও (উচ্চ মাধ্যমিক) সরস্বতী পুজোর গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখা গিয়েছে মুসলিম পড়ুয়াদের।
একাদশ শ্রেণির প্রিয়াঙ্কা খাতুন, রাসেল মণ্ডল, আলামিন মণ্ডল, দশম শ্রেণির রাজিয়া মণ্ডল, নবম শ্রেণির সোহেল সর্দারদের বেজায় পরিশ্রম হয়েছে গত দু সপ্তাহে। পুজোর দায়িত্ব সমান তালে সামলেছে তারা। রাসেল বলে, ‘‘সরস্বতী বিদ্যার দেবী। আমরা সকলেই তো ছাত্রছাত্রী। আমরা আমাদের মধ্যে কোনও বিভেদ রাখি না। বিদ্যা সবাই অর্জন করতে পারে। সেই কারণে আমরা সবাই দেবীর বন্দনা করেছি।’’