সুফলের সামনে লাইন। নিজস্ব চিত্র।
মধ্যবিত্তের কপালে ভাঁজ ফেলে খুচরো বাজারে আলুর দাম পঞ্চাশ ছুঁয়েছে মঙ্গলবার। আর তার জেরে অর্ধেক দামে আলু কিনতে দীর্ঘ লাইন পড়ছে সরকার ঘোষিত সুফল বাংলা স্টলে। এমনকি তাদের ভ্রাম্যমাণ গাড়িতেও। এদিকে দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি কমেছে খুচরো বাজারের বিক্রেতাদের।
কৃষি বিপণন দফতরের উদ্যোগে পুজোর আগে জেলায় যখন সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি ২৫ টাকা মূল্যে আলু বিক্রি শুরু হয়েছিল সেই সময় একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ চার কেজি আলু কিনতে পারতেন। এখন সেখানে এক কেজি কমিয়ে বাধ্যতামূলক ভাবে জন প্রতি তিন কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে। বেশি লোককে আলু কেনার সুযোগ করে দিতে পুজোর আগের সেই নির্দেশ পরিবর্তন হয়েছে বলে দফতর সূত্রে জানা যায়।
ফলে কম দামে আলু কিনতে দিনভর ভিড় হচ্ছে কৃষি বিপণন দফতরের কাউন্টারে। ওই দফতরের ভ্রাম্যমাণ গাড়ি কখনও কুঞ্জঘাটা তো কখনও গোরাবাজার তো কখনও বৈরগাছি এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছে। আলু কেনার চাহিদায় সেখানেও হচ্ছে লম্বা লাইন। অল্প দামে আলু কিনতে এক জনের পরিবর্তে দুই থেকে তিন জনেও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। দফতর সূত্রে জানা যায়, মুর্শিদাবাদে ১৬টি জায়গায় আলু বিক্রির জন্য কাউন্টার খোলা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ছ’শো থেকে সাড়ে ছ’শো আলু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন দফতরের আধিকারিকরা।
মঙ্গলবার খুচরো বাজারে আলুর দাম কেজি প্রতি ৫০ টাকা হওয়ায় সেই লক্ষমাত্রা ৬৫০ কুইন্ট্যাল ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে ওই দফতর সূত্রে জানা যায়। তবে পুজোর আগে সুফল বাংলার যাত্রা শুরু হলেও দিন কুড়ি আগে থেকে এই বিক্রয়কেন্দ্রগুলি থেকে অন্য আনাজের তুলনায় আলুর বিক্রি বেড়েছে। দফতরের হিসাব অনুযায়ী ইতিমধ্যে ছ’হাজার কুইন্ট্যালের কাছাকাছি আলু বিক্রি হয়েছে জেলার বিভিন্ন স্টলগুলিতে।
তবে জোগান ও চাহিদার উপর নির্ভর করে প্রতিদিন গড়ে হাজার কুইন্ট্যাল আলু কাশিমবাজার কৃষি বিপণন দফতরের গুদামে জমা হয়। ওই দফতর সূত্রে জানা যায়, দিনে একটা কাউন্টার থেকে সাড়ে তিন হাজার কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে। হাজার বারোশো লোক নিচ্ছে এক একটা কাউন্টার থেকে। তা সত্ত্বেও ভ্রাম্যমাণ গাড়ি সর্বত্রগামী না হওয়ায় অনেকে ৫০ টাকা কেজি দরেই আলু কিনতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান তাঁরা।
শীতকালীন আলু বাজারে এখনও আসেনি। তা সত্ত্বেও খুচরো বাজারে আলুর এত দাম কেন তা নিয়ে ধন্দে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও। তাঁদের আক্রমণের লক্ষ্য মুলত মজুতদার দিকে। বহরমপুরের পাইকারি বাজারে এদিন ৫০ কেজি জ্যোতি আলুর দাম ছিল দু’হাজার একশো তিরিশ থেকে দু’হাজার একশো ষাট টাকা। অথচ বাজারে আলু বিকিয়েছে ৫০ টাকা কেজি দরে। এক খুচরো বিক্রেতা বাপি কুন্ডু বলেন, “পাইকারি বাজার থেকে আলু কেনার পরে প্রত্যেক বস্তায় পাঁচ কিলো আলু খারাপ বেরোয়। সেই পাঁচ কেজি আলুর দাম কে দেবে?”
সুফল বাংলা স্টলে আলু বিক্রি শুরু হওয়ার পর খুচরো বাজারে আলু বিক্রি কমেছে দাবি করে ওই বিক্রেতা বলেন “সকাল ছ’টা থেকে বেলা আড়াইটে পর্যন্ত বসে থেকে আলু বিক্রি হয় একশো থেকে একশো পঁচিশ কেজি। আগে এর আগে দ্বিগুণ আলু বিক্রি হত।” এক সুর শোনা গিয়েছে পাইকারি ব্যবসাদারদের কাছেও। পাইকারি আলু বিক্রেতা নির্মল ভকত বলেন, “আমরা কম দামে আলু কিনলে কম দামে তা বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু তা তো হচ্ছে না।” এই রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী দিন বাজারে আলুর দাম আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিক্রেতারা।