প্রতীকী ছবি।
ইংরেজি নববর্ষ নিয়ে আমোদ-আহ্লাদের বয়স এক সপ্তাহও গড়ায়নি! এর মধ্যেই পেট্রল-ডিজেলের দাম সাম্প্রতিক কালে সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে। জ্বালানির দামে এ হেন বৃদ্ধির জেরে গণপরিবহণে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বুধবার থেকে বর্ধিত হারে কৃষ্ণনগরে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৭৮.৫৪ টাকা এবং পেট্রল ৮৬.৩৪ টাকা। দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জেরে মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে জেলার বেসরকারি বাসের। গত আট মাস ধরে বাস মালিকদের ভাড়া বৃদ্ধির দাবির সুরাহা না হওয়ায় ক্রমশ রাস্তা থেকে কমছে বাস। ট্রিপের সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেক করে লোকসান সামাল দিচ্ছেন বাস মালিকেরা।
এমনিতেই নতুন বছরের শুরুতে বেসরকারি বাসের ভাড়াবৃদ্ধির দাবি নিয়ে নতুন করে নড়েচড়ে বসেছেন বেসরকারি বাস মালিকেরা। তাঁদের রাজ্য সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের ডাকে আগামী ৯ জানুয়ারি রাজ্যের সমস্ত জেলার বাস মালিক সংগঠনগুলিকে নিয়ে বৈঠকে বসছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, গত তিন বছরে রাজ্যে বেসরকারি বাসের ভাড়া না বাড়লেও জ্বালানির দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। সঙ্গে বাসকর্মীদের বেতন, বিমা, কর সবই বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। লকডাউনের পর বেসরকারি বাস পরিষেবা চালু হওয়ার সময়ে ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমে রাজ্য জুড়ে বাস ধর্মঘটও করেছিলেন তাঁরা। সেই সময়ে ভাড়াবৃদ্ধি প্রসঙ্গে রাজ্য সরকার কমিটি গড়ে তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ভাড়া বাড়েনি এক পয়সাও। তাই নতুন বছরের শুরুতেই যখন সেই ভাড়াবৃদ্ধির দাবিত ফের সরব হয়েছেন বেসরকারি বাস মালিকেরা, তখনই জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পরিস্থিতি জটিল করবে বলেই অনুমান সংশ্লিষ্ট মহলের।
বেসরকারি বাস মালিকদের বক্তব্য, জ্বালানির দাম নাগাড়ে বেড়ে চলা সত্ত্বেও ভাড়া না বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসান ক্রমশ আকাশছোঁয়া হয়ে উঠছে। বাস না চালালে যত লোকসান চালালে তার চেয়ে ঢের বেশি। ফলে লাভজনক ট্রিপ ছাড়া রুটে বাস নামাচ্ছেন না মালিকেরা। রাস্তায় কমছে বাসের সংখ্যা। কোনও কোনও রুট কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যেমন রানাঘাট থেকে শান্তিপুর হয়ে বাগআঁচড়া রুটে এক সময়ে সাতখানা বাস চলাচল করত। এখন একটিও চলছে না। আবার রানাঘাট থেকে আঁইশমালি হয়ে সিন্দ্রানি রুটে একদা ১০টি বাস চলাচল করত। এখন সে পথও বন্ধ। বাস মালিকদের বক্তব্য, লোকসান দিয়ে বাস চালানোর একটা সীমা আছে। তাঁরা পেরে উঠছেন না।
নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির কার্যকরী সদস্য সন্তোষকুমার ঘোষের সাতটির বেশি রুটে বাস চলাচল করে। তিনি বলেন, “বিভিন্ন রুটে ট্রিপের যাত্রী সংখ্যা বুঝে গাড়ি চালানো ছাড়া আমাদের উপায় কী? ছ’টা ট্রিপের জায়গায় বড় জোর তিনটে। তাতেও ব্যস্ত সময় ছাড়া প্রতিটাই লোকসান। বাস মালিকদের অবস্থা এমনই এখন যে লোকে ধার দিতে চায় না। ধারের বোঝা মাথায় নিয়ে কিছু দিন আগেই মারা গিয়েছেন সাধন ঘোষ নামে একজন বাস মালিক, যাঁর এক সময়ে ১০টি রুটে বাস চলত।”
রানাঘাট বাস মালিক সমিতির চেয়ারপার্সন মদন দাস বলেন, “আমরা বারবার বলা সত্ত্বেও ভাড়া নিয়ে কোন হেলদোল নেই সরকারের। অন্য দিকে বাস রুটে প্রতিদিন বাড়ছে টোটো-অটো। তা হলে কি একটা সমান্তরাল পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে, এমনটাই ধরে নিতে হবে আমাদের?” নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি কুণাল ঘোষ বলেন, “পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে ৯ তারিখের পর রাজ্য জুড়ে বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও অবাক হবেন না।”
নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক এবং বর্তমানে কার্যকরী কমিটির সদস্য অসীম দত্ত বলেন, “পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে আগামী দিন আরও ভয়াবহ হতে চলেছে। এ ভাবে কোন ট্রিপে লোক হবে সেই বুঝে বাস চালানো বেশি দিন চলতে পারে না। আমরা বেসরকারি বাস মালিকেরা আর্থিক দুরবস্থার চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছি। ৯ তারিখে জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের বৈঠকেই জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ”