শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের গেটের সামনে দোকানে কারও মুখে নেই মাস্ক। শুক্রবার, কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র
শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার রাতে ডায়ালিসিস করে বাড়ি ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন ঘুর্ণির বাসিন্দা বছর বত্রিশের অঞ্জু বাগ।। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। অভিযোগ, ভর্তি নেয়নি জেলা হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের মেডিসিন বিভাগে কোনও চিকিৎসক নেই!
অসুস্থ কিশোরী কন্যাকে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ন’টা নাগাদ করিমপুরের গোড়ভাঙা জেলা হাসপাতালে এসেছিলেন বাউল শিল্পী ফকির নূর আলম। ইমার্জেন্সিতে মেয়েকে ভর্তি করতে পেরেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, সারারাত কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মেয়েকে দেখেননি। শুক্রবার বেলার দিকে হাসপাতাল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, মেডিসিনের কোনও চিকিৎসক নেই। অগত্যা মেয়েকে নিয়ে নূর আলম চলে যান কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে।
জেলা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসকের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসার পর কার্যত আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তার উপর বৃহস্পতিবার বিকেলে আরও এক শিশু বিশেষজ্ঞের করোনা ধরা পড়ার পর চিকিৎসকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। রাতেই বিভাগের ছ’জন চিকিৎসকের লালারস সংগ্রহ করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় যে, সংক্রমণ ছড়ানো আটকাতে রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ওই চিকিৎসকরা হাসপাতালে ডিউটি করবেন না। বাড়িতেই নিভৃতবাসে থাকবেন। তার পর থেকেই জেলা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে শুরু হয়ে যায় চরম অব্যবস্থা। মুখ থুবড়ে পরে পরিষেবা।
ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা বিভিন্ন রোগের রোগীরা চরম অসুবিধার সামনে পড়েন বলে অভিযোগ। কোনও চিকিৎসকই তাঁদের দেখতে আসছেন না। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের রেফার করা হচ্ছে। নতুন রোগী ভর্তি কার্যত বন্ধ। এতে জেলা হাসপাতালের দু’টি আইসোলেশন ওয়ার্ডের পাশাপাশি সারি ও কোভিড হাসপাতালেও চিকিৎসা পরিষেবায় সঙ্কট তৈরি হয়েছে। জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসারদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে কোনওমতে। এ ছাড়া অন্য বিকল্প পথ খোলা নেই বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জেলা হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলছেন, “সংক্রমণ রুখতে এটা আমাদের করতেই হল। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যেই ওই ছয় চিকিৎসকের রিপোর্ট চলে আসবে। তখন আর সমস্যা থাকবে না। ততক্ষণ অভিজ্ঞ জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসারেরাই কাজ সামলাবেন। প্রয়োজনে তাঁরা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে নিচ্ছেন।”
এই পরিস্থিতিতে নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে জেলা সদর হাসপাতালের এক শিশু বিশেষজ্ঞের করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। কিন্তু তার আগেই তিনি স্বাস্থ্যভবনের সঙ্গে করোনা-বিষয়ে ভিডিও কনফারেন্স করেন। তাঁর সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন ২২ জন নার্স। তাঁদের সবাইকে ইনস্টিটিউশন্যাল কোয়রান্টিনে রাখা হয়েছে। ওই চিকিৎসক কৃষ্ণনগর শহরের একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে ইসিজি করতেন। এ দিন হাসপাতালে আসার আগে তিনি সেখানে ১৫ জনের ইসিজি করে এসেছিলেন। সেই রোগীদের কী হবে, সে প্রশ্নও উঠছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রয়োজনীয় যা পদক্ষেপ করার সবই করা হবে। বিশেষজ্ঞ না থাকলেও চিকিৎসার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, টেলিফোনে সবসময় তাঁরা পরামর্শ দেওয়ার জন্য রয়েছেন। কেন তার পরও রোগী রেফার হচ্ছে তা আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”