প্রতীকী ছবি
অন্তঃসত্ত্বা মহিলার শরীরে ভুল রক্ত দেওয়ার কথা প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল গত ২৩ অগস্ট। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই জানিয়েছিল, ভুলবশত ও-পজিটিভের জায়গায় এ-পজিটিভ রক্ত দেওয়া হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি মহিলাকে। তার জেরে কিডনি বিকল হতে বসেছে ওই মহিলার। আপাতত কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর ডায়ালিসিস চলছে।
অথচ, ঘটনার পর পাঁচ দিন কেটে গেলেও শক্তিনগর হাসপাতালে সেই মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের কোনও শাস্তি হয়নি!
হাসপাতালের কর্তারাই জানিয়েছিলেন, সংশ্লিষ্ট টেকনোলজিস্ট ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। ফলে প্রশ্ন উঠছে, ভুলের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরেও এত গুরুতর গাফিলতির জন্য অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন এত গড়িমশি? তা হলে কি অন্য কোনও চাপে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ?
হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত সোমবার, অর্থাৎ ২৬ অগস্ট সেন্টু শেখ নামে ওই মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টকে শো কজ করা হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে ২১ অগস্ট। রক্ত পরীক্ষায় ভুল হওয়ার কথা প্রমাণিত হয়েছে ২৩ অগস্ট। তা হলে কীসের জন্য শো কজটুকু করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২৬ তারিখ পর্যন্ত বসে রইলেন সেই প্রশ্নও উঠছে। সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকারের বক্তব্য, “কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া পালন করতে হয়।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়ের কথায়, “যার ভুলে এতবড় একটা ঘটনা ঘটে গেল তাকে কোনও রকম ছাড় দেওয়া হবে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।” অভিযুক্ত সেন্টু শেখ অবশ্য ঘটনার পর থেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন না, ফোনও ধরেননি। তাঁর পরিবারের এক জন ফোন ধরে জানান যে, সেন্টু বাড়ি নেই।
গত বুধবার চাপড়ার এলেমনগরের বাসিন্দা জেসমিনা মল্লিক নামে ওই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তির পর রক্ত দেওয়া হয়। তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাঁর রক্তাল্পতা ছিল বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতালে তাঁকে রক্ত দেওয়া হয়। এর পরই তাঁর পরিবারের তরফে লিখিত ভাবে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার অভিযোগ জানানো হয়েছিল। প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা মানতে চাননি। তদন্ত শুরু করেছিলেন। মহিলার রক্ত ফের পরীক্ষা করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষ মেনে নেন, ‘ও পজিটিভ’ এর জায়গায় মহিলাকে ‘এ পজিটিভ’ রক্ত ভুলবশত দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাচক্রে এর পরেই মহিলা মৃত সন্তান প্রসব করেন। ভুল রক্ত দেওয়াই শিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ী কিনা তা ময়নাতদন্তের আগে নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। শিশুর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। ওই হাসপাতালেই মহিলার ডায়ালিসিস চলছে। তাঁর স্বামী ইমরান মল্লিকের কথায়, “আমার সন্তান গেল। স্ত্রী মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। অথচ যার ভুলে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল তার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপই করা হল না।”