সমরেন্দু গয়ালির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।
এক সময় পৈতৃক জমি চাষবাস করেই চলত সংসার। পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার পর হাতে ‘ক্ষমতা’ পেয়েই ভোল বদলে যায় তৃণমূল নেতার। এমনই অভিযোগ উঠছে হাঁসখালি গণধর্ষণ-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ব্রজগোপাল গয়ালির বাবা সমরেন্দু গয়ালির বিরুদ্ধে। এলাকায় তিনি পরিচিত সমর নামেই। অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দাদের বিবাদে নাক গলিয়ে তাঁদের মামলা করতে ওসকাতেন সমর। এমনকি, কখনও কখনও গ্রাম্য কোনও লড়াইয়ে ‘হাতা’ গুটিয়ে নেমে পড়তেও দেখা গিয়েছে সমরকে। এর পর ‘ত্রাতা’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন তিনি। মামলার হাত থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার নাম করে বাদী এবং বিবাদী পক্ষের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করতেন বলেও অভিযোগ।
নদিয়ার হাঁসখালির গাজনা গ্রাম পঞ্চয়েতের শ্যামনগরের বাসিন্দা সমর। স্থানীয় বাসিন্দাদের কারও কারও অভিযোগ, সমর পঞ্চায়েত সদস্য হলেও এলাকায় অনেক বার মারপিটে জড়িয়েছেন। গণধর্ষণের অভিযোগে ধৃত ব্রজগোপালের বাবা যে ‘কীর্তিমান’ সে ইঙ্গিত মিলেছে সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসা একটি ভিডিয়োয়। অভিযোগ, স্থানীয় কাকতলা বাজারে এক ব্যবসায়ীর জমি দখল করে নিতে চাইছিলেন সমর। সে জন্য ওই ব্যবসায়ীর উপর হামলাও চালান তিনি। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, সমর ওই ব্যবসায়ীকে ধরে মারধর করছেন। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
সমর ‘সর্প’ হয়ে যেমন ‘দংশন’ করেন, তেমনই ‘ওঝা’ হয়েও না কি ‘ঝাড়েন’! এমনই অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। শান্তিলতা মণ্ডল নামে সমরের এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘গ্রামের বাসিন্দাদের অনেককেই সমর বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দিত। এর পর সেই মামলার ফাঁস থেকে বার করে আনার নাম করে বাদী এবং বিবাদী পক্ষের কাছ থেকে টাকা আদায় করত ও। এ ছাড়া গ্রামের বিভিন্ন নারীঘটিত ব্যাপারেও নাক গলিয়ে ও টাকা আয় করত। এ ভাবেই চলত তোলাবাজি। আমার থেকে ও ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল। কিন্তু আমি এক টাকাও দিইনি। সে জন্য আমার জমির ফসল নষ্ট করেছে। বাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমাকে ঘরছাড়াও করে দিয়েছিল। আমি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ তা নেয়নি। থানা এবং কয়েক জন উকিলের সঙ্গে যোগসাজশ আছে সমরের।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের কারও কারও অভিযোগ, সমরের ছেলে নামেই কলেজে পড়ত, আসলে সে মাদক ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত। সমরের কথা বলতে গিয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘উনি তো চোর হয়ে চুরি করেন আবার পুলিশ হয়ে হাতকড়াও পরান। ওঁর ছেলে যে এমন হবে তা আর আশ্চর্য কী!’’