বিয়ের কথা পাকা হয়ে গিয়েছিল। দু’পক্ষের দেখাশোনা, দুই বাড়ির কথাবার্তাও শেষ। কথা ছিল, ইদের পরেই বিয়ের দিন স্থির হবে।
এক প্রতিবেশী যুবক আবার ওই তরুণীকে বিয়ে করতে চাইছিল। তরুণী নিজে যে খুব গররাজি ছিলেন, এমনটা নয়। কিন্তু বাড়ির সিদ্ধান্তের কথা ভেবে তিনি পিছিয়ে আসেন।
তরুণীর পরিজনদের অভিযোগ, এর পরেই তাঁকে শায়েস্তা করতে জোর করে তোলা কিছু আপত্তিকর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয় যুবকটি। এর পরেই লোকলজ্জায় আত্মঘাতী হন বেলডাঙা এসআরএফ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, বছর বিশেকের ওই তরুণী। প্রতিবেশীরা জানান, ভারী শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিলেন তিনি। একটু লাজুকও। মঙ্গলবার ঘর থেকেই তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে রেজিনগর থানার পুলিশ। ময়না-তদন্তও হয়।
প্রেম বা বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করায় সোশ্যাল মিডিয়ায় মেয়েদের, কখনও-কখনও ছেলেদেরও লাঞ্ছিত করা কার্যত রুটিন হয়ে উঠছে ইদানীং। পুলিশের মতে, প্রত্যাখ্যানের বদলা নিতে অ্যাসিড ছোড়ার মতো এ ভাবে ‘শ্লীলতাহানি’ করার প্রবণতাও ক্রমশ প্রবল হয়ে উঠছে এক শ্রেণির তরুণ-তরুণীর মধ্যে।
পুলিশ জানায়, মৃতার বাড়ি রেজিনগর থানার নাজিরপুর গ্রামে। তাঁর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে মাসুম শেখ নামে যে যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে সপরিবার গ্রামছাড়া। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে।
মৃত তরুণীর বাবা এলাকার এক জন পরিচিত ব্যবসায়ী। এক উচ্চবিত্ত যুবকের সঙ্গে তিনি মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন। সব কথাবার্তা পাকা হয়ে গিয়েছিল। কথা ছিল, ইদ কাটলেই বিয়ের দিন ঠিক হবে। কিন্তু পড়শি মাসুম শেখ মেয়েটিকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। মাসুমের সঙ্গে তার মেলামেশার ছবি পাত্রকেও পাঠিয়ে দেয় সে। অন্য ভাবেও ওই সব ছবি ছড়াতে থাকে।
পিঙ্কির বাবার অভিযোগ, ‘‘পাইপ বেয়ে আমার বাড়ির দোতলার ঘরে উঠেছিল মাসুম শেখ নামে ছেলেটি। আমার মেয়ে ভাইবোনদের সঙ্গে শুয়ে ছিল। তাকে জোর করে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে আপত্তিকর ছবি তোলে মাসুম। তার পর সেই ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়।’’ তরুণীটিকে ধর্ষণও করা হয়েছিল বলে বাড়ির লোকজন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন।
মৃতার পরিবারের দাবি, তাঁর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই অপমানে গলায় ফাঁস দিয়ে ঘরের পাখা থেকে ঝুলে আত্মহত্যা করেন তরুণী। তাঁর আত্মীয় রৌশনা বিবি বলেন, ‘‘ওর তো বিয়ের ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও পড়শি ওই যুবক ওকে বিয়ে করতে চেয়ে জোরাজুরি করছিল। ও চাপের মুখেও রাজি হয়নি। তাই বদলা নিয়ে ওর কিছু ছবি নানা ভাবে ছড়িয়ে দেয় মাসুম শেখ। তাতে অপমানিত হয়ে ও মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছে।’’
রেজিনগর থানার পুলিশ জানায়, মাসুম শেখকে খোঁজা হচ্ছে। ঠিক কী পরিস্থিতিতে তরুণীটি আত্মঘাতী হলেন, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।