প্রবল গরম, জামাইষষ্ঠী তার উপরে রবিবার—তিনে মিলে বহরমপুর শহর জুড়ে যেন অলিখিত ‘কার্ফু’ জারি হয়েছিল!
শহরের জনবহুল, ব্যস্ততম রাস্তা ছিল জনশূন্য। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড চত্বর খাঁ খাঁ করেছে। বাসে-ট্রেকারে-অটোতে সেই অর্থে যাত্রী ছিল না বললেই চলে। পথে বের হয়নি টুকটুক গাড়িও। সকাল থেকে ভুরিভোজের পরে মাত্রাতিরিক্ত গরমে শহরের পথে আর তেমন কেউই আর বের হতে চাননি। এ দিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই জামাইষষ্ঠী বাড়িতে বসেই কাটানো শ্রেয় বলে মনে করেছেন।
তবে বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁ থেকে আগাম অর্ডার দিয়ে প্যাকেট বন্দি খাবার আনিয়ে জামাইষষ্ঠীর দিনে দুপুরের আহার করেননি এমন পরিবার মেলা ভার। সন্ধ্যার পরে এক ঝলক বৃষ্টি হতেই ঘরে বসে না থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরেছেন অনেকেই। ইন্দ্রপ্রস্থের গসিপ মোড়-এর বাঙালিয়ানা খাবার আগাম অর্ডার দিয়ে জামাইয়ের পাতে দিয়েছেন অনেক পরিবার। ওই রেস্তোরাঁ মালিক শৈবাল রায় বলেন, ‘‘জামাইয়ের জন্য বাড়িতে হরেক রান্না তো রয়েইছে। বাড়তি হিসেবে ট্যাংরার ঝাল, ইলিশ ভাপা, শুক্তো, বিভিন্ন রকম ডাল, ছানার ডিম রান্নার আগাম অর্ডার ছিল। দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন বাড়িতে সময়ের মধ্যে তা পাঠিয়েও দেওয়া হয়।’’ রাতের জন্য মাটন বিরিয়ানি, ফ্রায়েড রাইস, চিকেন কোর্মা, সুখা মাটন, চিকেন রাজস্থানির চাহিদা রয়েছে বলে তিনি জানান।
বাঙালিয়ানা রান্নায় শুধু নয়, পরিবেশ তৈরির দিক থেকেও ছাপিয়ে গিয়েছে রেজাউল করিম মার্কেট কমপ্লেক্সের দোতলায় নতুন তৈরি হওয়া এক রেস্তোরাঁ। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে দরজা ঠেলে ঢোকার মুখেই ডান দিকে রয়েছে তুলসি তলা। সেখানে জ্বলছে সন্ধ্যে প্রদীপ। খড় দিয়ে তার চাল ছাওয়া। ওই রেস্তোরাঁ মালিকদের অন্যতম অরিন্দম মণ্ডল জানালেন, ‘‘এ দিন দুপুরে ছিল চিতল মাছের কোর্মা, ট্যাংরা মাছের ঝাল, সর্ষে ভাপা ইলিশ, রুই মাছ, লাউ চিংড়ি, এঁচোড়ের কোপ্তা, ধোকার ডালনা, আলু পোস্ত। সঙ্গে দেশি মুরগির মাংস। শেষ পাতে ছিল দই ও মিষ্টি।’’ রাতেও খাদ্য রসিক বহরমপুরবাসী অবশ্য অন্য ধরণের খাবার খেতেই বেশি পছন্দ করেন।
লালদিঘির পাড়ের নামী হোটেল মালিক চন্দন সরকার জানালেন, জামাই ষষ্ঠী উপলক্ষে রুই পোস্ত, ইলিশ ভাপা, ইলিশ মাছের ডিম ভাজা, শুক্তো, মুড়ো ঘণ্ট ছাড়াও শেষ পাতে ছিল বেনিয়াগ্রামের বিখ্যাত লিচু ও গাছ পাকা আম। শিল্পতালুকে গড়ে ওঠা এক হোটেলের মালিকদের অন্যতম অশেষ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, মাছের নানা পদ তো ছিলই। সেই সঙ্গে তন্দুরী স্টাফড্ পটাটো, চিকেন চিঙ্গারি কাবাব, চিকেন স্টিক, ম্যাক্সিকান চিকেন, ফ্রাই চিকেন, মাটন নুরানি শিক কাবাব, বাদশাহি মুগের কদর ছিল।