পড়শি জেলা

এ তো মোদের জামাই গো

সীমান্ত পেরোলেও স্বভাব যায় না! না হলে ও পারের আসরাফুল এ পারে এসে দালানকোঠায় খুলে বসে ‘চক্রবর্তী ট্রাভেলস’? ট্রাভেলস অবশ্য নামেই, চাকরি দেওয়ার আড়ালে দূর-দুরান্তে পাড়ি দেওয়ার পাকা বন্দোবস্ত হত স্বল্পবয়সী মেয়েদের।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

হাঁসখালি শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২৬
Share:

বাংলাদেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর। —নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত পেরোলেও স্বভাব যায় না!

Advertisement

না হলে ও পারের আসরাফুল এ পারে এসে দালানকোঠায় খুলে বসে ‘চক্রবর্তী ট্রাভেলস’?

ট্রাভেলস অবশ্য নামেই, চাকরি দেওয়ার আড়ালে দূর-দুরান্তে পাড়ি দেওয়ার পাকা বন্দোবস্ত হত স্বল্পবয়সী মেয়েদের।

Advertisement

পুরনো ব্যবসা সহজে ভোলা যায়, যেমন ভোলা সহজ নয় পুরনো ‘কর্মস্থল’। দিন কয়েক আগে, সীমান্ত পেরিয়ে ফের বাংলাদেশে পা দেওয়ার মাসুলটা তাই বড্ড বেশি হয়ে গিয়েছিল আসরাফুল ইসনাম মিলনের। বমাল ধরা তো পড়েই ছিল, ও পারের পুলিশ, খোঁজ খবর করতে এ পারের সীমান্ত গ্রামে ছানবিন শুরু করতেই সরে গিয়েছিল পর্দাও। বাংলাদেশি পুলিশের হাতে ছবি দেখে হইহই করে উঠছিল মুড়াগাছা— “আরে এতো আমাদের জামাই গো!”

বছর চারেক ধরে হাঁসখালির বগুলা-মুড়াগাছায় রীতিমত জাঁকিয়ে বসা মিলন চক্তবর্তীকে দেখে চোখ তখন কপালে উঠেছে সীমান্ত বসতে।

দুহাতে টাকা উড়িয়ে আর মিঠে কথায় গ্রামীণ মানুষের মন পেতে অসুবিধা হয়নি তেমন। বাজারের কালীপুজো থেকে গ্রামের কোজাগরি— পুরোহিতও ছিল সে। হালফিলের স্করপিও, জাইলো, ডিজায়ার কিনে ফেঁদে বসেছিল ‘চক্রবর্তী ট্রাভেলস’। কাঠা দশেক জমি কিনে খুড়শ্বশুরের বাড়ির পাশেই তুলেছিল আস্ত দালানকোঠা।

তবে, সে বাড়ির ভিতরে উঁকি দেওয়ার জো ছিল না। পেল্লাই পাঁচিল দিয়ে ঘেরা যে!

তবে, বছর খানেক ধরে ছবিটা কিঞ্চিৎ বদলে যেতে শুরু করেছিল। পাঁচিল ঘেরা সেই দালানকোঠায় চাকরির দরখাস্ত নিয়ে হাজির হতেও দেখা যাচ্ছিল দূর গাঁয়ের ছেলেপুলেদের। আনাগোনা বাড়ছিল মুখ ঢাকা তরুণীদেরও। প্রশ্ন জাগলেও, ‘জামাই’য়ের স্বভাব চরিত্র নিয়ে এ নিয়ে অবশ্য উচ্চবাচ্চ করেননি কেউ।

হিসেবটা বদলে দিল বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারা। ৩১ জানুয়ারি আসরাফুলকে গ্রেফতারের পরে খোঁজ পড়ে মুড়াগাছার ‘পুরোহিত’ মিলন চত্রবর্তীর। আর তখনই বেরিয়ে পড়ে, আসরাফুলই আসলে মুড়াগাছার মিলন।

যার বাড়ি আদতে বাংলাদেশ। নাম-ধর্ম-পেশা বদলে যে এ বার কারবার ফেঁদেছে এ দেশের সীমান্তে।

বছর চারেক আগে বাংলাদেশের যশোহর জেলার চোঙারডাঙা গ্রামে গোপাল বিশ্বাসের মেয়ে মিতাকে বিয়ের সময়েই নিজের পরিচয় বমাল বদলে ফেলেছিল সে।

মিতার তিন কাকা থাকেন মুড়াগাছায়। প্রায় ত্রিশ বছরের আবাস। কর্মসূত্রে তারা এখন রাজস্থানে।মুড়াগাছায় থাকেন তাঁদের বৃদ্ধা মা কৌশল্যা বিশ্বাস। নাম বাঁড়িয়ে মিলন থাকতে শুরু করে সেখানেই। মিলন চক্রবর্তী নামে তার পাসপোর্ট এমনকী ভোটার তালিকায় নামও তুলে ফেলে আসরাফুল। সদ্য তৈরি হয়েছে তার আধার কার্ডও।

স্থানীয় বাজারের কালীপুজোর অন্যতম কর্মকর্তা স্বর্ণ ব্যবসায়ী অমর দাস বলেন, “আমি মিলনকে খুব কাছ থেকে পুজো করতে দেখেছি। মন্ত্রোচারণ তো ঠিকঠাকই করছিল বলে মনে হয়েছল।” প্রায় একই সুরে কৌশল্যাদেবী বলেন, “নাতজামাইটা যে অমন ধাপ্পাবাজ বুঝব কী করে!’’

আর, গ্রামে মিলনের পড়শি শেফালী বিশ্বাস বলছেন, “প্রবাদ আছে, দুষ্টু লোকের মিষ্টি কথা। এখন সেটাই হাড়ে হাড়ে বুঝছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement