ডাকাতির অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। প্রথমে উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপুকুর এলাকার বাসিন্দা মনিরুল শেখ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসা করে বাকিদের নাম জানতে পারে পুলিশ। সেই মতো রবিবার খোসবাসপুর এলাকা থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতেরা হল মাসা শেখ, মিরাজুল শেখ ও মোজাম্মেল শেখ।
ধৃতদের রবিবার কান্দি মহকুমা আদালতে তোলা হয়। ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। মুর্শিদাবাদ জেলার অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালের বিচারক সুজিত ঝা ধৃতদের তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় একের পর এক ব্যাঙ্কে ডাকাতির ঘটনা ঘটছিল। গত কয়েক মাসে মুর্শিদাবাদ জেলার রানিনগর এলাকার ব্যাঙ্কে, সালার থানার শিমুলিয়া এলাকার ব্যাঙ্কে ও বড়ঞা থানার সাটিতারা শাখায় ও সম্প্রতিকালে গত ২৯ জুন কান্দি থানার পুরন্দরপুর এলাকায় এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই ব্যাঙ্কের পিছন থেকে জানালা ভেঙে ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢুকে সিসিটিভি ভেঙে দিয়ে ভল্ট ভাঙার চেষ্টা করেছে ওই দুষ্কৃতীর দল। তবে সব ক্ষেত্রে ভল্ট ভাঙতে সক্ষম হয়নি তারা। কান্দির পুরন্দরপুরে ভল্ট ভেঙে প্রায় চার লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
লাগাতার এমন ঘটনা ঘটতে থাকায় জেলা পুলিশ দশ জনের একটি তদন্তকারী দল তৈরি করে। আর তাতেই সাফল্য মেলে। পুলিশের দাবি, সিসিটিভির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আগে যেটুকু ছবি ধরা পরেছে সিসিটিভির ফুটেজে সেটাকে হাতিয়ার করেই তদন্ত শুরু করে ওই দল। তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমেই পুলিশের জালে ধরা পারে উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা মনিরুল শেখ। মনিরুলকে গ্রেফতার করে কান্দি থানায় নিয়ে আসার পরে তার কাছ থেকে খোসবাসপুরের বাসিন্দা ওই তিনজনের নাম জানতে পারে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ব্যাঙ্ক ডাকাতির সাথে মোট ১৮জনের একটি দল জড়িত রয়েছে। বাকিদের নাম পুলিশ ধৃতদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে বলেও দাবি পুলিশের।
মুর্শিদাবাদ জেলা ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ডাকাতির ছক কষেছিল ওই দুষ্কৃতীর দল। এই রাজ্য ছাড়াও ওড়িষা, বিহার ও ঝাড়খণ্ডেও ব্যাঙ্ক লুঠের সঙ্গে জড়িত আছে ওই দলটি। ওই জেলার স্থানীয় ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার দুষ্কৃতী ও বিহার ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুষ্কৃতীরা একত্রিত হয়ে একটি দল গঠন করে। ওই দলের অন্যতম মনিরুল শেখ এখন পুলিশের হাতে চলে আসায় দলের মূল পান্ডা পুলিশের নাগালে আসতে আর বেশি দেরি নেই বলেও দাবি জেলার পুলিশ কর্তাদের।
মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “ব্যাঙ্ক ডাকাতির সঙ্গে জড়িত এমন চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ব্যাঙ্ক ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করার জন্য দশ জনের একটি তদন্তকারী দল গঠন করে ওই কাজ করা সম্ভব হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সাহায্য নিয়ে মনিরুলদের মতো দুষ্কৃতীরা ব্যাঙ্ক ডাকাতি করত। বিহার ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুষ্কৃতীরাও ওই দলে আছে। আমরা বাকীদের খুব তাড়াতাড়ি গ্রেফতার করতে পারব বলে মনে হচ্ছে। এখনও ধৃতদের কাছ থেকে ডাকাতি হওয়া ব্যাঙ্কের সম্পদ ফিরে পাওয়া যায়নি বলেও দাবি পুলিশের।