মারাদোনার পায়ের ছোঁয়া পাওয়া বল নিয়ে। নিজস্ব চিত্র
ফুটবলের যাদুকর মারাদোনার মৃত্যুতে গোটা বিশ্বের ফুটবল জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পোস্টার-ব্যানার, জার্সি, ছবির প্রতিকৃতিতে পুষ্প প্রদানের মধ্যে দিয়ে গোটা বিশ্ব যখন ফুটবলের রাজপুত্রকে স্মরণ করছে, তখন তাঁরই কিক করা ফুটবলে ফুলের মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন করিমপুরের ফুটবল রেফারি দীপক মজুমদার।
২০১৭ তে দিয়েগো মারাদোনা যখন কলকাতায় এসেছিলেন, তখন বারাসতের একটি স্টেডিয়ামের উদ্বোধন উপলক্ষে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং মারাদোনা একাদশের মধ্যে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল। মাঠে নেমে মারাদোনা খেলা শুরুর আগে স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু ফুটবল কিক করে গ্যালারিতে পাঠিয়ে ছিলেন। ওই দিন গ্যালারিতে থাকা হাজার হাজার দর্শকের মাঝে উপস্থিত ছিলেন করিমপুরের পরিচিত রেফারি দীপক মজুমদার। মারাদোনার শট মারা একটি বল দীপকের কাছে চলে আসে। মারাদোনার পদস্পর্শ প্রাপ্ত সেই ফুটবলেই শুক্রবার ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দীপক। তিনি জানান, ২০১৭-র ১২ ডিসেম্বর ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনা আর ক্রিকেটের মহারাজ সৌরভের ফুটবল দলের মধ্যে প্রীতি ম্যাচের আমন্ত্রণপত্র পেয়ে গ্রামের ছোটবেলার বন্ধু কলকাতার প্রবাসী গগন বালা ম্যাচের আগের দিন সন্ধ্যায় তাঁকে ফোন করে যেতে বলেন। দ্বিতীয় কোনও কথা না বলেই রাজি হয়ে যান। ম্যাচ শুরুর আগে মারাদোনা মাঠে নেমেই বলে লাথি মেরে গ্যালারিতে বসা দর্শকের উদ্দেশ্যে পাঠাচ্ছিলেন। কাড়াকাড়ি করে সংগ্রহ করছিলেন দর্শকরা।
দীপকের কথায়, “প্রথমে ভেবেছিলাম বলগুলি কর্তৃপক্ষ ফেরত নিয়ে নেবে। পরে বুঝলাম ওগুলি দর্শকদের স্মারক হিসেবে দিয়ে দিচ্ছে। তখনই খুব প্রাণ চাইছিল, মারাদোনার পায়ের স্পর্শ পাওয়া বল পাওয়ার জন্য। বলতে বলতেই একটি বল সামনে চলে আসে। অন্যরা বলের কাছে পৌঁছনোর আগেই ছুটে গিয়ে বলটা লুফে নিই। সারা ফুটবল বিশ্ব যাঁর কাছে শ্রদ্ধায় নত হয়, তাঁর কিক করা বল পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম।”
বুধবার রাতে মারাদোনার মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে কাঁচে বাঁধানো সেই ফুটবলের দিকে তাকিয়ে তিন বছর আগের ওই দিনটির কথা চোখের সামনে ভেসে উঠছে দীপকের। তাঁর আক্ষেপ, “সে দিন কলকাতার মাঠে পুলিশকে টপকে মারাদোনাকে ছুঁতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পুলিশের লাঠির আঘাত পড়তে পারে বলে আমি সে দিন ফুটবলের ভগবানকে ছুঁতে পারিনি।”