এক পদে পাঁচটি নাম, বিপাকে তৃণমূল

পদ একটি, কিন্তু তার দৌড়ে রয়েছেন অনেকে। কল্যাণীতে বিরোধী শূন্য পুরবোর্ডের উপ-পুরপ্রধান কে হবেন, তা নিয়ে টানাপড়েন চলছে তৃণমূলের অন্দরে! তৃণমূল সূত্রেই খবর, উপ-পুরপ্রধান পদে অন্তত ৫টি নাম ঘোরাফেরা করছে। তাঁদের কেউ রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কেউ অনুগামীদের কাছে প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে নিজের তুলনা করে বোঝাতে চাইছেন তিনি ওই পদে কতটা যোগ্য। কারও মত উপ-পুরপ্রধান মহিলা হলেই ভাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০১:২৮
Share:

পদ একটি, কিন্তু তার দৌড়ে রয়েছেন অনেকে। কল্যাণীতে বিরোধী শূন্য পুরবোর্ডের উপ-পুরপ্রধান কে হবেন, তা নিয়ে টানাপড়েন চলছে তৃণমূলের অন্দরে!

Advertisement

তৃণমূল সূত্রেই খবর, উপ-পুরপ্রধান পদে অন্তত ৫টি নাম ঘোরাফেরা করছে। তাঁদের কেউ রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কেউ অনুগামীদের কাছে প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে নিজের তুলনা করে বোঝাতে চাইছেন তিনি ওই পদে কতটা যোগ্য। কারও মত উপ-পুরপ্রধান মহিলা হলেই ভাল। অনেকেই আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২১ আসনের পুরসভায় অর্ধেকেরও বেশি তফসিলী জনজাতি সম্প্রদায়ের। তাঁদের মধ্যে থেকেই ওই পদে কাউকে নেওয়া হোক। তবে অন্দরে এ নিয়ে যতই চাপানউতোর চলুক, প্রকাশ্যে মন্তব্য করে কেউই নেতৃত্বের বিরাগ ভাজন হতে চাইছেন না।

কল্যাণীর সম্ভাব্য পুরপ্রধান পদে বি-ব্লকের বাসিন্দা ১১ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর নিলিমেশ রায়চৌধুরীর নাম এখনও অবধি সর্বসম্মত হয়ে রয়েছে। কারণ, তাঁকে সামনে রেখেই দল নির্বাচনে জিতেছে। পুরপ্রধান তাঁর যোগ্যতা নিয়েও বিশেষ কারও সংশয় নেই। জট শুধু উপ-পুরপ্রধান ঘিরে।

Advertisement

২০১০ সালের নির্বাচনে বামেদের হারিয়ে ২০ ওয়ার্ড বিশিষ্ট কল্যাণী পুরসভার ১১টি ওয়ার্ডে জেতে তৃণমূল। ৭টি বাম, ২টি পায় কংগ্রেস। প্রদীপকুমার সুর পুরপ্রধান, সুশীলকুমার তালুকদার উপ-পুরপ্রধান হন। কয়েক মাস যেতে না যেতেই তৃণমূল কাউন্সিলরদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এক সময় দলীয় কাউন্সিলরদের একাংশ প্রদীপবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। তৃণমূলেরই এক সূত্রে খবর, কাউন্সিলরদের একত্রিত করেছিলেন উপ-প্রধান সুশীলবাবুই। শেষমেষ দু’জনকেই সরানো হয়। তখন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিলিমেশ রায়চৌধুরীকে পুরপ্রধান এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণ দাসকে উপ-পুরপ্রধান করে নতুন বোর্ড গড়া হয়।

এ বার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাক্তন দুই উপ-প্রধান সুশীল তালুকদার ১ নম্বর নম্বর ওয়ার্ড থেকে এবং কল্যাণ দাস ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন। তাঁদের ওই পদে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এলাকায় মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করার পরিচিতিও রয়েছে। সে সব কারণে তাঁরা ফের উপ-পুরপ্রধান পদে নির্বাচিত হতে পারেন এই আশা জিইয়ে রাখছেন তাঁদের অনুগামীরা। অন্য কাদের নাম উঠে আসছে?

১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন বলরাম মাঝি। তিনি দক্ষ সংগঠক, দলের তফসিলি জনজাতি সংগঠনের নেতা। এলাকায় ভালই পরিচিতি রয়েছে তাঁরও। একই সঙ্গে তিনি রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছের লোক বলে পরিচিত। ২০১০ সালে তিনি বলরামবাবুর হয়ে প্রচারেও এসেছিলেন। ফলে দৌড়ে রয়েছেন তিনিও। শহরের এ ব্লকের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হয়েছেন লক্ষ্মী ওঁরাও। আদিবাসী আন্দোলনের নেত্রী লক্ষ্মীদেবী। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আদিবাসীদের আন্দোলনে তাঁকে সামিল হতে দেখা গিয়েছে। তিনি আবার সাহিত্যিক মহাশ্বেতাদেবীর কাছের লোক বলে পরিচিত। কাউন্সিলর না থাকা সত্বেও এলাকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগেও তাঁকে সরব হতে দেখা গিয়েছে।

জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি সুনীলকুমার তরফদার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন। শ্রমিক নেতা হওয়ার সুবাদে সর্বত্র তাঁর যে পরিচিতি রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি আবার সংঠগনের সভাপতি তথা সাংসদ দোলা সেনের কাছের লোক বলে পরিচিত।

এই পাঁচটি নাম ঘিরেই জোর জল্পনা চলছে কল্যাণী শহরে। প্রকাশ্যে কেউই মুখ খুলতে চাননি। প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান সুশীলবাবু বলেন, ‘‘এখনও উপ-পুরপ্রধান নিয়ে দলে আলোচনা হয়নি।’’ দল যাঁকে ভাল মনে করবেন, তাঁকেই দায়িত্ব দেবেন, বলছেন আর এক প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান কল্যাণবাবু। লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘‘এলাকার উন্নয়ন করাই প্রধান কাজ। সেটা দায়িত্ব নিয়ে করব।’’ শ্রমিক নেতা সুনীলবাবু জানালেন, তাঁর ব্যক্তিগত কোনও চাওয়া পাওয়া নেই। দলের স্বার্থই সবার আগে। সকলের সঙ্গে সহমত বলরামবাবুও। মন্তব্য করতে চাননি সম্ভাব্য পুরপ্রধান নিলিমেশ রায়চৌধুরীও। দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানিয়েছেন কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায়। দলে কোনও দ্বন্দ্ব নেই বলেও তাঁর দাবি।

এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, রাজ্য নেতৃত্ব যাঁর নাম খামে ভরে পাঠাবেন তাঁর ভাগ্যেই শিকে ছিঁড়বে। এখন দেখার, কে সেই ভাগ্যবান!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement