প্রতারণার অভিযোগে ধৃত।প্রতীকী ছবি।
সহজ কিস্তিতে মোটা টাকা ঋণ, টাকা জমা রাখলে এক বছরে দ্বিগুণ, সেই সঙ্গে আধার কার্ড করে দেওয়ার প্রলোভন।
একটি লগ্নি সংস্থার নামে দিনের পর দিন লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করল শান্তিপুর থানার পুলিশ। দু’টি কম্পিউটার এবং প্রিন্টারও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু জাল আধার কার্ড।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম সমীর বিশ্বাস, সৌমেন দে, দেবকুমার রায়, তুলসী বর্মণ ও রবীন্দ্রনাথ রায়। বয়স সাতাশ থেকে বত্রিশের মধ্যে। সমীর চাপড়ার লোক, তুলসী কোচবিহারের। বাকিরা শান্তিপুরেরই। মাস কয়েক আগে শান্তিপুর হাসপাতালের কাছেই ‘টিউলিপ হেলথ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংস্থার অফিস খুলে বসেছিল তারা। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেখান থেকেই তাদের ধরে আনা হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় তারা অপরাধ কবুল করেছে। শনিবার রানাঘাট আদালতে তোলা হলে তাদের চার দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সারদা, এমপিএস, রোজ ভ্যালির মতো বেশ কিছু বড় লগ্নি সংস্থা লক্ষ লক্ষ মানুষের বিপুল টাকা ডুবিয়ে দেওয়ার পরে কিছু দিন লোকে কিছুটা সতর্ক হয়েছিল। প্রশাসনের নজরদারি বেড়েছিল। ফলে, খানিকটা গুটিয়ে গিয়েছিল লগ্নি সংস্থার কারবারিরা। এখন পরিস্থিতি একটু শুধরোতেই যে ফের তলে-তলে অনেকে মাঠে নেমে পড়েছে, শান্তিপুরের এই ঘটনা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পাঁচ জন সম্ভাব্য খদ্দেরদের বলছিল, তাদের সংস্থার সদস্য হলে কম সুদে টাকা ধার দেওয়া হবে। এক সঙ্গে এক লাখ ১০ হাজার টাকা জমা রাখলে এক বছর পরে দু’লাখ টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। যাদের আধার কার্ড নেই, তাদের তাও করে দেওয়া হবে। তার জন্য ৪২৫ টাকা দিয়ে সদস্যপদ নিতে হবে। প্রথম প্রথম কয়েক জনকে বছরে ১২ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছিল। শান্তিপুরের নানা এলাকার কয়েক হাজার মানুষ সংস্থার সদস্যপদ নিয়েছিলেন। মাসে দেড়শো জনকে সদস্য করতে পারলে সাত হাজার টাকা বেতন দেওয়ার শর্তে বেশ কিছু যুবক-যুবতীকে চাকরিও দেয় তারা।
কিন্তু গত মাস কয়েক ধরে সদস্য বেড়ে চললেও কাউকেই ঋণ দেওয়া হচ্ছিল না। একের পর এক দিন দিয়ে সদস্যদের ঘোরানো হচ্ছিল। তখনই কিছু লোকজনের সন্দেহ হতে থাকে। সন্দিহান হয়ে পড়েন কিছু কর্মীও। সম্প্রতি তাঁদেরই এক জন শান্তিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগকারিণী অপর্ণা বিশ্বাস বলেন, “এই বছরই শান্তিপুর কলেজ থেকে বিএ পাশ করেছি আমি। চাকরি খুঁজছিলাম। ওই সংস্থাটিতে আবেদন করলে ওরা চাকরি দেয়।” এক মাস আগে কাজে যোগ দেন অপর্ণা। ৩০ জনের বেশি সদস্য জোগাড় করতে পারেননি। কিন্তু সংস্থার কাজকর্মের ধরন দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তার পরেই তিনি পুলিশে খবর দেন।