কেমো নিয়েই মাধ্যমিকের তারকা সুরভী

মার্কশিটে ‘৫৯২’ লেখাটা দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারছিল না সুরভী গঙ্গোপাধ্যায়। মাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ নম্বর অবশ্য অনেকেই পেয়েছে। কিন্তু সুরভীর লড়াইয়ের ব্যপ্তিতেই সে আজকের তারকা।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৭ ০২:২১
Share:

ক্যামেরার ফ্ল্যাশটা ঝলসে উঠতেই চকচক করে উঠল চোখের কোনটা।

Advertisement

কয়েক মাসের মধ্যে ১২টা কেমোথেরাপি আর ১৭ বার রেডিয়েশন নিতে হয়েছে তাকে। আর তারই মধ্যে যখনই শরীরটা একটু সঙ্গ দিয়েছে, তখনই সে বসে পড়েছে বই নিয়ে। মার্কশিটে ‘৫৯২’ লেখাটা দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারছিল না সুরভী গঙ্গোপাধ্যায়। মাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ নম্বর অবশ্য অনেকেই পেয়েছে। কিন্তু সুরভীর লড়াইয়ের ব্যপ্তিতেই সে আজকের তারকা।

অনেকেই বারণ করেছিল, এ বার পরীক্ষায় বসতে। কিন্তু কারও কথাই শোনেনি কৃষ্ণনগরের হোলি ফ্যামিলি গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রীটি। কারণ তার লড়াই তো আর শুধু ক্যানসারকে হারানো নয়। সুরভীর কথায়, “শুধু ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করলেই তো হবে না, জীবনের অন্য লড়াইগুলোতেও তো জিততে হবে।” তাই তো কোনও কিছু না ভেবে কারও কথা না শুনে জেদ ধরেছিল সে—“পরীক্ষাটা দিতেই হবে।”

Advertisement

বাবা উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন কৃষি দফতরের আধিকারিক। সুরভীর যখন মাত্র আড়াই বছর বয়স, তার বাবা মারা যান ব্লাড ক্যানসারে। মা জয়া গঙ্গোপাধ্যায় কৃষি দফতরেই চাকরি পান। সেই থেকে মা-মায়ের এক লড়াই শুরু।

সব কিছু ভালই চলছিল। ক্লাসের মেধাবী ছাত্রী। নবম থেকে দশম শ্রেণিতে ওঠার সময় দ্বিতীয় হয় সে। কয়েক দিন ক্লাস করেছে কী করেনি, দেখা দিল রোগটা। গত বছর জানুয়ারি মাসে শুরু হয় জ্বর আর কাশি। কিছুতেই সারতে চায় না। শেষে ফেব্রুয়ারি মাসে ধরা পড়ল বাবার মতো তার শরীরেও বাসা বেঁধেছে ক্যানসার। মধ্যমগ্রামে জেঠু শিবপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে থেকে শুরু হল চিকিৎসা। এখনও পর্যন্ত ১২টা কেমোথেরাপি আর ১৭টা রেডিয়েশন নিতে হয়েছে তাকে। টেস্টের আগেই শেষ হয়েছিল কেমো। মা জয়া গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “যখন দিনরাত দুশ্চিন্তায় রয়েছি, মেয়েটা আদৌ বাঁচবে কি না, তখন ও সুযোগ পেলেই বসে পড়ত বই নিয়ে।”

টেস্ট পরীক্ষার পরে শেষ তিন মাস কৃষ্ণনগরের রোড স্টেশন পাড়ার বাড়িতে তিন জন গৃহশিক্ষকের কাছে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে সে। সারা বছর তো কখনও হাসপাতালে, কখনও বাড়িতে কেটেছে। স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হত না। প্রয়োজনে স্কুলের শিক্ষিকাদের কাছে ফোন করে পড়া জেনে নিত সুরভী। কখনও বা কঠিন কোনও প্রশ্নের উত্তর। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সিস্টার অ্যানসিটা বলেন, “এইটুকু মেয়ে যে ভাবে লড়ল, বিশ্বাসই হয় না।”

তার সব চেয়ে ভাল লাগে ফেলুদাকে। কঠিন লড়াইয়ে বালিশের পাশে থেকেছে ফেলুদা সমগ্র। তবে যে কোনও রহস্য গল্প পড়তেই ভালবাসে সুরভী। আর ভালবাসে বাবার মতো কৃষিবিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement