একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে বিশ্বকাপ দেখছেন আমন্ত্রিতেরা। নিজস্ব চিত্র
মুর্শিদাবাদ থেকে দোহার দূরত্ব প্রায় চার হাজার কিলোমিটার। কলকাতা থেকে উড়ানে যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টার কিছু বেশি। দোহা থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরের লুসাইল স্টেডিয়ামে গতকাল শেষ হয়েছে চলতি বছরের ফুটবল বিশ্বকাপ। ফুটবলের নেশায় আর স্বপ্নের নায়ক লিওনেল মেসিকে কাছ থেকে দেখতে পাওয়ার বাসনায় চার বন্ধু মিলে সেই সুদূর কাতারে ছুটে গিয়েছিলেন চিকিৎসক কল্যাণ মিত্র।
কিন্তু জেলা জুড়ে বিভিন্ন ক্লাবেও রবিবার রাত থেকে ছিল উৎসবের মেজাজ। বহু মানুষ বিশ্বকাপ দেখেছেন পাড়ার ক্লাবে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে মিলে। কেউ বা শীতের রাতে সবাই মিলে রাস্তায় বসেই।
প্রথম রাউন্ডের দু’টি খেলা কাতারের স্টেডিয়ামে বসে দেখেছেন কল্যাণ। তাঁর আফশোস “যে আর্জেন্টিনার খেলা সামনে থেকে দেখব বলে অত দূরে গেলাম সেই আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠবে জানলে ফাইনালটা স্টেডিয়ামে বসেই দেখতাম।”
সপরিবারে ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা দোহার স্টেডিয়ামে বসে দেখেছেন চিকিৎসক সুদীপ সরকার ও তাঁর আর এক বন্ধু চিকিৎসক। সুদীপের গলাতেও স্টেডিয়ামে বসে প্রিয় দলের ফাইনাল খেলা দেখতে না পাওয়ার আক্ষেপ শোনা গেল। তিনি বলেন, “এমনিতে টিভিতে খেলা দেখার থেকে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার মজা আলাদা। মারাদোনার খেলা দেখে আর্জেন্টিনাকে ভালবাসি আমার ছোটবেলা থেকে। সেই দল ফাইনালে উঠল। সেই খেলাটা সামনে থেকে দেখতে পারলে এখন মনে হচ্ছে খুব ভাল হত।” তবে মেসি ও এমবাপের খেলা সামনে থেকে দেখে এসে তাঁর মনে হয়েছে “এমবাপের তুলনায় মেসি অনেক বেশি দক্ষ।”
ফুটবল বিশ্বকাপের সূচি পাওয়া ইস্তক সৌদি আরব যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন ওই চিকিৎসকেরা। সেই মতো কল্যাণ মিত্ররা নভেম্বরের ২৯ তারিখ রওনা দিয়েছিলেন। ৩০ তারিখ রাতে দেখেছেন আর্জেন্টিনা আর পোল্যান্ডের খেলা। এদিন তিনি বলেন, “দেশটাকে আহামরি কিছু লাগেনি। দেশে যে ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে একমাত্র স্টেডিয়ামের আশেপাশে গেলে। কিন্তু স্টেডিয়াম ৯৭৪ খুব সুন্দর।” পরের দিন কোস্টারিকা ও জার্মানির যে খেলা তাঁরা দেখেছেন সেই স্টেডিয়ামও তাঁর ভাল লেগেছে। তিনি বলেন, “যে কোনও স্টেডিয়ামের চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যেতে হত স্টেডিয়ামে। কিন্তু সেই পথ হাঁটতে ক্লান্তি লাগেনি।”
চলতি মাসের ৮ তারিখ কাতারে গিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের দুটি খেলা দেখেছেন সুদীপরাও। তিনি বলেন, “আমার কাতার দেশটা বেশ ভাল লেগেছে। ওখানকার মানুষ খুব পরোপকারি। খুব ভাল গাইড করেছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। ভিন দেশে যে আছি তা মনেই হচ্ছিল না।”
কল্যাণ বলেন, “ওখানে বাংলাদেশি ট্যাক্সি চালক যেমন ছিলেন তেমনই পাকিস্তানের ট্যাক্সি চালকও ছিলেন। ফলে ভাষার যেমন সমস্যা হয়নি, তেমনই খাওয়া দাওয়ারও সমস্যা হয়নি।’’