গাছ তলাতেই ছানার কারবার

‘‘উড়ছে মাছি ভনভনিয়ে, যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে?’’ না, পাল্কির গান এ নয়। নিছক সাদামাটা এক বাজারের রোজনামচা মাত্র। কান্দির ছানা বাজারে মাছির তাণ্ডব এলাকার মানুষের কাছে চোখসওয়া। আর ছানা লুঠ করে পিঠটান দেওয়া কুকুরের পিছনে হনহনিয়ে তাড়া করার দৃশ্যও খুবই চেনা। তবে এমনটা কিন্তু হওয়ার কথা ছিলনা।

Advertisement

কৌশিক সাহা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০২:২১
Share:

বাঁ দিকে পড়ে রয়েছে তৈরি বাজার। ডানদিকে গাছ তলাতেই চলছে ছানার কারবার।—নিজস্ব চিত্র।

‘‘উড়ছে মাছি ভনভনিয়ে,

Advertisement

যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে?’’

না, পাল্কির গান এ নয়। নিছক সাদামাটা এক বাজারের রোজনামচা মাত্র। কান্দির ছানা বাজারে মাছির তাণ্ডব এলাকার মানুষের কাছে চোখসওয়া। আর ছানা লুঠ করে পিঠটান দেওয়া কুকুরের পিছনে হনহনিয়ে তাড়া করার দৃশ্যও খুবই চেনা।

Advertisement

তবে এমনটা কিন্তু হওয়ার কথা ছিলনা। অস্বাস্থকর এই রোজনামচা থেকে শহরবাসীকে মুক্তি দিতে প্রায় এক দশক আগে তৈরি হয়েছে ছানা বাজার। পাকাপোক্ত সেই বাড়ি অসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। তার ফলে বাসস্ট্যান্ডের মতো ব্যস্ত রাস্তার উপরে চলছে ছানার বিকিকিনি। চালু হলনা কেন? উত্তর নেই জেলাপরিষদের। সে বাজার তারাই তৈরি করেছে। তবে ‘খুব শীঘ্রই’ চালু করার বাঁধা আশ্বাসই তারা দিয়েছে বরাবরের মতো।

২০০৭সালে। এলাকায় ছানা ব্যবসায়ীদের জন্য বাজার ভবন তৈরি করেছিল মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ। ন’ কামরার ঘর-সহ মাথার উপর ছাওনি দেওয়া পাকা বাজার। অভিযোগ তৈরি হলেও ওই বাজার ভবনটি চালুই করতে পারেনি জেলাপরিষদ। তাই বর্তমানে ওই কান্দি-সাঁইথিয়া রাজ্য সড়কের ধারেই ছানার বাজার বসে।

শ’দুয়েক ব্যবসায়ী এখানে রোজ ব্যবসা করেন। তাঁদের দাবি, কান্দি বাজার থেকে মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে ছানা সরবরাহ হয় এমন নয়। ওই বাজারের ছানার উপর নির্ভর করে বীরভূম এমনকী পড়শি রাজ্য ঝারখণ্ডও। ছানা ছাড়াও ওই বাজার থেকে টন টন ক্ষীরও রফতানি হয়। উত্তর বঙ্গের ছয়টি জেলা ছাড়াও কলকাতা বাজারেও ট্রাক বোঝায় করে ক্ষীর ও ছানা সরবরাহ হয় বলেই দাবি ব্যবসায়ীদের। দুপুর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তা এবং ক্যানালের পাশ বরাবর বসেন ব্যবসায়ীরা।

হাড়ি বা বালতিতে করে নিয়ে আসা হয় ছানা। আর হাড়ি বা বালতির আশেপাশে ঘুরে বেড়ায় কুকুর। ভনভন করে ওড়ে মাছি। কখনও তক্কে তক্কে থাকা কুকুর আবার কখনও গাছের ডালে বসে থাকা পাখি মওকা বুঝে ছানা মুখে দৌড় মারে। তাই ব্যবসায়ীদের এখন হাতে গুলতি নিয়ে পাখি তাড়াতে হয়।

ব্যবসায়ীদের দাবি, ওই বাজারটি চালু হলে এমন দুর্ভোগের হাত থেকে বাঁচা যাবে। আবার সাধারণ মানুষের বক্তব্য, রাস্তার উপরে ছানা, ছানার জল পড়ে থাকার জন্য এলাকা অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ছে।

ওই বাজারটি চালু না হলেও বাজারের নয়টি ঘরই এখন দখল করে বসেছেন এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে রথীন ঘোষ বলেন, “আমরা বাজারের ঘরের জন্য জেলা পরিষদের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এখনও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ওই বাজারের মধ্যে ঘর নিয়ে বসে ব্যবসা করছি।” তবে লক্ষন ঘোষ, দামোদর ঘোষের মতো বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই রাস্তার ধারে গাছের নীচে বসে ব্যবসা করছেন প্রায় চার দশক ধরে।

কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের সুকান্ত ত্রিবেদি বলেন, “আমরা জেলা পরিষদের কাছে আগেও ওই বাজারটি চালু করার কথা জানিয়েছি। আবারও দাবি জানাব। কিন্তু কেন বাজারটি চালু হচ্ছেনা সেটা বুঝতে পারছিনা।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদার বলেন, “বাজারটি চালু করার চেষ্টায় করছি। দশ বছর বাজারটি চালু না হওয়ায় ফের সংস্কার দরকার। সংস্কার করে ভবনটি যাতে চালু করা যায় সেটা দেখছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement