জন্ম শংসাপত্র নিতে স্কুলে ভিড়।
পরনে মলিন লুঙ্গি। ঘাড়ে তেল চিটচিটে গামছা। ঘনঘন ঘাম মুছে হন্তদন্ত হয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢুকে পড়লেন এক প্রৌঢ়। তারপর, প্রধান শিক্ষকের সামনে প্রায় বসে পড়লেন, ‘‘ও মাস্টার আমার দাদো তো তোমার এই স্কুলেই পড়েছিল। ষাট সালের একটা ছাট্টিপিট (সার্টিফিকেট) আমাকে দিতেই হবে।’’
আবদারের এমনতরো হাজারো বহরে ডোমকল এলাকার স্কুলগুলির এখন নাভিশ্বাস উঠেছে। ডোমকলের মাঝপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিমুল ইসলামের কপালে তাই বিন্দু বিন্দু ঘাম। সদ্য স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছেন। মিডডে মিল থেকে সরকারি নানা ফতোয়ার ফলে মাথার চুল উঠে যাচ্ছে! মোটা খাতার পাতা একের পর এক উল্টাতে ব্যস্ত তিনি, ১৯৬৫ সালের আগে কোনও রেকর্ড নেই তাঁর স্কুলে। সেলিমুল বলেছেন, ‘‘এনআরসি’র ভয়ে মানুষ যে ভাবে সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য স্কুলে ভিড় জমাচ্ছে তাতে অন্য সব কাজ লাটে উঠেছে। বহু পুরানো মোটা মোটা খাতাগুলো টেবিলে নিয়েই দিনভর বসে থাকছি চেয়ারে। মাথা তোলার অবস্থা নেই।’’
ক্লাস, ঘাড়ের উপরে মিডডে মিলের বোঝা, তারপরে বছরের নানা সময়ে সরকারি নানা প্রকল্পে মাঠে নামতে হয় তাঁদের। ফলে লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছিল এত দিন। এখন এনআরসির ধাক্কায় প্রায় লাটে উঠেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া।
শিক্ষকদের এখন স্কুলে পৌঁছে করতে হচ্ছে করণিকের কাজ। সকাল থেকে স্কুলের গেটে খাড়া থাকছে মানুষ। এমনকি সীমান্তের হাইস্কুল গুলোতেও ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে। জলঙ্গি সীমান্তের চোয়াপারা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম রহমান বলছেন, ‘‘আগেও অনেকে সার্টিফিকেট নিতে আসতেন, কিন্তু কিছু দিন থেকে সেই সংখ্যাটা অনেক বেড়ে গিয়েছে। দু’জন করণিক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করছেন বলে রক্ষে হচ্ছে আমাদের।’’
জলঙ্গির সীমান্তের গঞ্জ সাগরপাড়া। সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রত্যুষ সরকার বলছেন, ‘‘এত দিন নানা হ্যাপা সামলে এসেছি আমরা। কিন্তু এ বারের হ্যাপাটা বড় সমস্যার।’’
ডোমকলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুকর্ণা দাস বলছেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে স্কুল জেরবার।’’