পরীক্ষাকেন্দ্রে মৌমিতা। নিজস্ব চিত্র
সদ্য পিতৃবিয়োগের শোক নিয়েই শনিবার মাধ্যমিকে ভৌতবিজ্ঞানের পরীক্ষায় বসল মৌমিতা সরকার।
সামশেরগঞ্জের নিমতিতা হাইস্কুল থেকে এ বার পরীক্ষা দিচ্ছে হাটপাড়ার মৌমিতা। তার সিট পড়েছে চাচন্ডা বি জে হাইস্কুলে।
শুক্রবার রাত জেগে ভৌত বিজ্ঞানের বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছিল। বাবা শুয়ে ছিলেন বিছানায়। আচমকা বাবার বুকে প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হয়। চিকিৎসক ডেকেও শেষরক্ষা হয় নি। মৃত্যু হয় বাবা-র। শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন মা লক্ষীদেবী ও মেয়ে মৌমিতা কেউই। পাড়াপ্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। মৌমিতার বাবা বছর বাহান্নোর সঞ্জিত সরকার পেশায় মাছের ব্যবসায়ী। দুই মেয়েরই বিয়ে দিয়েছেন মাস ছ’য়েক আগে। তাঁর ইচ্ছে ছিল, কলেজ পর্যন্ত পড়িয়ে ছোট মেয়ের বিয়ে দেবেন। মেয়েকে বলেছিলেন, মাধ্যমিক পাশ করলে স্কুটি কিনে দেবেন। পরীক্ষা শুরুর পর থেকে বাবা-ই রোজ মেয়েকে নিয়ে যেতেন পরীক্ষাকেন্দ্রে।
বাবার মৃতদেহ আঁকড়ে মৌমিতা জানিয়েছিল, বাবাকে এ ভাবে ফেলে রেখে সে পারবে না পরীক্ষা দিতে যেতে। প্রতিবেশীরাও মতামত দিয়েছিল, না-ই বা দিল এ বছর পরীক্ষাটা।
কিন্তু সদ্য বিবাহিত কলেজ পড়ুয়া বড়দি বোনের মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন—‘‘বাবার ইচ্ছে ছিল, মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফল করে কলেজে পড়বি তুই। বাবা-র জন্য তোকে পরীক্ষা দিতে হবে। পাশ করতে হবে।” দিদির কথাতেই চোখ মুছে পরীক্ষাকেন্দ্রে এসেছিল মৌমিতা। পরীক্ষা শুরু হতে তখন মিনিট দশেক সময় বাকি। প্রধানশিক্ষক মিজাউর রহমান প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘এত দেরি কেন?’’ তাতে কান্নায় ভেঙে পড়ে মৌমিতা। সব জেনে প্রধান শিক্ষকও হতবাক! নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে মৌমিতার কান্না থামিয়েছিলেন তিনি।
পরীক্ষা শেষে মৌমিতা যখন বাড়ি ফিরল তখন বাবা-র সৎকার করে বাড়ি ফেরেছেন সকলে। মায়ের বুকে আছড়ে পড়ে হাউহাউ করে কাঁদতে লাগল সে—‘‘বাবা আমি পরীক্ষা দিয়ে ফিরলাম। কিন্তু তুমি ফিরলে কই?” মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কান্না চেপে মা লক্ষীদেবী তখন বলছেন, “ আমি তো রয়েছি। মন শক্ত কর। বাবার ইচ্ছেপূরণের কঠিন লড়াইটা এ বার লড়তে হবে তোকে।’’