এ রকম মানুষ যেন না জন্মায়

আইএস-এর শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদির মৃত্যুসংবাদ শুনে সমরের স্ত্রী দীপালি টিকাদার বলছেন, “এই পরিণতি আগেই হওয়া উচিত ছিল। বাগদাদির মতো মানুষ যেন আর না জন্মায়, ঈশ্বরের কাছে শুধু এই প্রার্থনা করি।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

হাঁসখালি  শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০১:১২
Share:

মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে দীপালি। নিজস্ব চিত্র

আইএস জঙ্গিরা তাঁর স্বামীকে খুন করে ইরাকের মাটিতে পুঁতে দিয়েছিল। সেটা ২০১৪ সাল। ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল ফিরে আসে ইলেকট্রিশিয়ান সমর টিকাদারের কফিনবন্দি কয়েকটা হাড়ের টুকরো।

Advertisement

আইএস-এর শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদির মৃত্যুসংবাদ শুনে সমরের স্ত্রী দীপালি টিকাদার বলছেন, “এই পরিণতি আগেই হওয়া উচিত ছিল। বাগদাদির মতো মানুষ যেন আর না জন্মায়, ঈশ্বরের কাছে শুধু এই প্রার্থনা করি।”

বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা মহখোলা গ্রাম। মাটির ঘরের পাশেই সরু খাল। ও পারে বাংলাদেশের মুনশিপুর। সমর আর দীপালির দুই সন্তান। জমিজিরেত তেমন নেই। অভাব ঘোচাতে চড়া সুদে টাকা ধার করে, স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিয়ে ২০১১ সালে সমর পাড়ি দেন ইরাকে। সেখান থেকে যে টাকা পাঠাতেন তা দিয়ে দেনা শোধ করে, গয়না ছাড়িয়ে সবে ব্যাঙ্কে ১৭ হাজার টাকা জমেছিল। একটু-একটু করে সুখের মুখ দেখতে শুরু করেছিল পরিবারটা। ভাল থাকার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল।

Advertisement

সমর শেষ বার বাড়ি ফিরেছিলেন ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে, অসুস্থ মাকে দেখতে। ১৮ দিন থেকে আবার ইরাকে ফিরে যান। কিন্তু সব কিছু আর ঠিকঠাক চলছিল না। এক দিন ফোনের ও পার থেকে উদ্বিগ্ন গলায় সমর জানিয়েছিলেন, সেখানকার পরিস্থিতি ভাল নয়। তিনি যে সংস্থায় কাজ করেন, তারা তাঁদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার পর আর কোনও খোঁজ নেই।

একটা বড় রকমের খারাপ কিছু যে ঘটেছে, সেটা আঁচ করাই যাচ্ছিল। বছর দুই ঘুরে গেল। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ২০১৬ সালে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর কাজ পান দীপালি। বাড়ি থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দূরে, কাঁদিপুরে। রোজ সাইকেলে এতটা রাস্তা যাতায়াত করেন। পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নবান্নে গিয়ে দেখা করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী ভাল চাকরির প্রতিশ্রতি দেন। কিন্তু আজও তা তিনি পাননি। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত কর্মীর পদে চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর নাম ‘ওয়েটিং লিস্ট’-এ ১২ নম্বরে। সরকারি ঘরের প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছেন দিন কয়েক আগে। ২০০৭ সালে সমর হাঁসখালির গোবিন্দপুর কলোনিতে বাড়ি করবেন বলে জমি কিনেছিলেন। সেই জমি ওই এমনিই পড়ে আছে।

দীপালির ছেলে, একাদশ শ্রেণির ছাত্র সুদীপ হাঁসখালির হলদিপাড়ায় মামার বাড়িতে থাকে। মেয়ে শর্মিষ্ঠা মহখোলায় থাকে মায়ের কাছে। পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। সুদীপের বাবার কথা কিছুটা মনে থাকলেও শর্মিষ্ঠার নেই। ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার দিনেও বাবার নাম শুনে সুদীপ সেঁধিয়ে যায় ঘরে। নিজের মনে খেলে বেড়ায় শর্মিষ্ঠা। দীপালি বলেন, “বাবা কি জিনিস, ও জানলই না!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement