গরম ভোটার কার্ড চাই? ফোন পুলিশে

নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের সীমান্ত সংলগ্ন নানা এলাকায় এমন ভোটার কার্ড ঝাঁকে-ঝাঁকে তৈরি হয়। তা দিয়ে জাল পাসপোর্ট বেরোয়, এ দেশের নাগরিক বনে যায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১০
Share:

ভরদুপুরে পুলিশের বড়কর্তার কাছে এল একটা উড়ো ফোন। ও প্রান্ত থেকে কেউ ফিসফিস করে বলল, ‘স্যার, বিদুপুর বাজারে মনিরুলের দোকানে হাতেগরম নকল ভোটার কার্ড পাবেন।’ পড়িমরি সেখানে পৌঁছে পুলিশ দেখে, পর্দা টানা পিছনের ঘরের টেবিল জুড়ে শ’খানেক ভোটার কার্ড। সবে ল্যামিনেশন হয়ে বেরিয়েছে। এক নজরে নকল বলে বোঝার উপায় নেই। গোল স্টিকারও ঝকঝক করছে। দোকান মালিককে তুলে এনে কয়েক ঘা দিতেই বেরিয়ে পড়ল কায়দাটা। আসল কার্ড জলে ভিজিয়ে স্টিকার তুলে লাগানো হয়েছে নকল কার্ডে।

Advertisement

নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের সীমান্ত সংলগ্ন নানা এলাকায় এমন ভোটার কার্ড ঝাঁকে-ঝাঁকে তৈরি হয়। তা দিয়ে জাল পাসপোর্ট বেরোয়, এ দেশের নাগরিক বনে যায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা। পরে গ্রামে বিয়ে করে শ্বশুরকে বাবা বানিয়ে ভোটার কার্ডের ছবি বদলে দিয়েও বানানো হয় জাল পরিচয়পত্র। অনেক সময়ে পঞ্চায়েত প্রধানেরাও এঁদের স্থানীয় বাসিন্দা বলে শংসাপত্র দিতে কসুর করেন না। এই জাল ছড়িয়েছে বহু দূর। গত বছর জুলাইয়ে জাল ভোটার কার্ড তৈরির চক্রের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দু’জনেই শান্তিপুর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এদের এক জনের বাবা একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তাঁদের বাড়িতে হানা দিয়ে পুলিশ দেখে, ছাত্র দু’টি কম্পিউটার ব্যবহার করে জাল ভোটার কার্ড তৈরি করছিল। মুখের ছবি বদলে দেওয়া হচ্ছিল নিখুঁত ভাবে। মোবাইলের সিম তোলার জন্যই তারা ভোটার কার্ড জাল করত। তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে রানাঘাটের মোবাইল সিম বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা করেছিল।

কান্দির হাটপাড়া গ্রামের মহিলা পঞ্চায়েত প্রধান গ্রামেরই এক মৃত মহিলার নামে ভোটার পরিচয়পত্র বের করে, তা দিয়ে জাল পাসপোর্ট বানিয়ে, দালালকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে আরব চলে গিয়েছিলেন। পরে পাসপোর্ট পুনর্নবীকরণের জন্য মৃতার বাড়িতে চিঠি গেলে জানাজানি হয়।

Advertisement

বাংলাদেশ ঘেঁষা এলাকাগুলোয় জাল ভোটার কার্ড তৈরি হয় মূলত দু’ভাবে। এক) নওদা, হরিহরপাড়া, দৌলতাবাদ, লালগোলা, ভগবান গোলা, রানিতলা, জলঙ্গি, রানিনগর, ডোমকল, ইসলামপুরের মতো গ্রামে এসে বাংলাদেশিরা থাকতে শুরু করে। পরে শ্বশুরকে ‘বাবা’ সাজানো হয়। দুই) মৃতের ভোটার কার্ড জোগাড় করে নাম-ঠিকানা অবিকৃত রেখে কম্পিউটারের সাহায্যে নিজের ছবি বসিয়ে নকল কার্ড বানানো হয়। তার জন্য কম্পিউটার কেন্দ্রও খুলে রেখেছে এক শ্রেণির দালালেরা।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদে জাল ভোটার কার্ড বেশি তৈরি হয় মহালন্দি, হাটপাড়া, উত্তরপাড়া, রাধারঘাট, শাহজাদপুর, বহরমপুর, কান্দি, ভগবানগোলা, খড়গ্রাম, নগর, পাঁচগ্রামে। বহরমপুরে আঞ্চলিক পাসপোর্ট কেন্দ্রের আশপাশেও কিছু দালাল কম্পিউটার সাজিয়ে বসেছে। পাসপোর্ট অফিসের কর্মীরা জড়িত না থাকলে জাল ভোটার কার্ড দিয়ে পাসপোর্ট বানানো সম্ভব নয়, কেননা ভোটার কার্ডের নম্বর দিলেই সব তথ্য ও ছবি চলে আসে। প্রশ্ন হল, গোয়েন্দা দফতরও কি সন্দেহের সম্পূর্ণ ঊর্ধ্বে?

উত্তরটা কিন্তু অনেকেই জানেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement