আঁধার-পদ্মা ২
River Padma

ভাসাই দিমু, মাছের খাবার অইয়া জ়াবি

অতল পদ্মা রুপোলি রং নিয়ে দিনভর পড়ে আছে, রাতে তার অন্য চেহারা। অন্ধকার নিয়ে তার রাত যাপন, সেই আঁধার পদ্মার মাঝিদের অন্যরকম অভিজ্ঞতা শুনল আনন্দবাজার

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

জলঙ্গি শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২০ ০০:১৯
Share:

পদ্মার ওপারের বড় মসজিদের মাইকে আজান ভেসে আসছে উত্তুরে হাওয়ায় মিশে। ভোর হলেও পদ্মায় তখনও অন্ধকার। ঘন কুয়াশায় হাত কয়েক দুরের জিনিসও ঠাওর করা যায় না। গোটা কয়েক ইলিশ পেয়ে চনমনে বংশীবদন হালদার। জলঙ্গির সাগরপাড়ার বংশী ঝুড়ি মাথায় নিয়ে এক পা মাটিতে অন্য পা নৌকায়, আচমকা গলায় উঠে এল মস্ত বড় হাঁসুয়া। হেঁড়ে গলার স্বর, 'বেটা কন যাচ্ছস। আমাগো ওপারে নামায় দিয়া আয়। না হলে পদ্মার জলে ভাসায় দিমু, মাছের খাবার হইয়্যা জ়াবি।’

Advertisement

হাতে ধারালো অস্ত্র, মুখে কালো কাকাপড়টা উল্টে মাথায় দেওয়া। বড়ো বড়ো পাক খাওয়া গোঁফ। ভোরের হালকা আলোয় দেখতে পেয়ে বংশীর আর বুঝতে অসুবিধে হয় না এরা কারা। ফেলে আসা সেই বোরটা এখনও মনে আছে তাঁর—পদ্মায় মাছ ধরতে গিয়ে অনেক রকম হ্যাপা পোহাতে হয়েছে আমাদের। কখনও বিএসএফের, কখনও বিজিবি’র খপ্পরে পড়ে হাজারো কৈফিয়ৎ, কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কখনও পড়িনি।’ নৌকার হাল টানতে টানতে বংশীর বার বার মনে হয়েছে এটাই শেষ যাত্রা। হয় বাংলাদেশের জেলে পচতে হবে, না হলে পৌঁছনোর পর গলাটা ছাড়িয়ে দেবে।

নৌকা যত বাংলাদেশের দিকে এগিয়েছে, উল্টানো লুঙ্গি পরা জনা পাঁচেক মানুষের মুখ ততই পরিস্কার হয়েছে তার। হাতের ধারালো অস্ত্রে লাল আলো পড়ে ঝলক দিচ্ছে। বৃদ্ধ হলেও আজও মনে পড়ে প্রাণে বাঁচতে সেই যাত্রা ‘স্যার’, ‘বাবু’ কম বলতে হয়নি বাংলাদেশের সেই ডাকাতদের। কিন্তু তাতেও মন গলেনি তাদের। বংশী বলেন, ‘‘কেবল ওপারে পৌঁছে দিয়ে শেষ হয়নি, শীতের রাতে অনেক পরিশ্রম করে যে কটা ইলিশ ধরেছিলাম সেটাও নিয়ে নিয়েছিল ওরা। বলেছিল কাউকে কিছু বললে পরের বার আর রক্ষে হবে না। আর মাঘের ঠাণ্ডায় দড়দড়িয়ে ঘামতে ঘামতে প্রাণ পনে হাল টানতে টানতে ঘরে ফিরে ছিলাম যখন, তখন ঘাম ছুটে জ্বর এল। তার পর দিন কয়েক আর পদ্মা-মুখো হতে পারিনি।’’বছর কয়েক আগেও পদ্মার বুকে এমনই জল-ডাকাতের সঙ্গে লুকোচুরি করেই রাত কাটত জেলেদের।লালকুপের দিদার শেখ বলছেন, ‘‘রাতের পদ্মায় মাছের খোঁজে ভেসে বেড়াতাম আমরা। এক দিকে যেমন বাংলাদেশি দস্যুদের অত্যাচার ছিল, তেমনই ছিল এপারের খিদিরপুরের দুলা ডাকাতের অত্যাচার। ও ব্যাটা সব সময় বড় নৌকা নিয়ে আক্রমণ করত ধীবরদের। মাছ কেড়ে নেওয়ায় ছিল ওর প্রধান লক্ষ্য, অনেক সময় ধীবরদের রাতের রান্না করা ভাত-পুঁটির ঝোলটুকুও সাবড়ে দিত!’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement