ফাইল চিত্র
নবদ্বীপের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় বছর তিনেক হল যোগ হয়েছে একটি নতুন নাম। ‘জল প্রকল্প’। নবদ্বীপের উত্তরে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে গঙ্গার ধারে আলো ঝলমলে জলপ্রকল্পে ঘুরতে যান বহু মানুষ। গঙ্গা থেকে জল তুলে শোধন করে নাগরিকদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রায় সোয়া একশো কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছে ‘সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’। লোকমুখে যা জলপ্রকল্প নামে পরিচিত। বিশুদ্ধ পানীয় জল শহরের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে গড়ে তোলা জলপ্রকল্প নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের যতটা গর্জন ছিল, কার্যক্ষেত্রে ততটা বর্ষণ হল কই?
পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডে পানীয় জল পৌঁছে যাওয়ার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি প্রকল্প চালু হওয়ার তিন বছর পরেও। পুরনাগরিকদের একাংশ তেমনই জানাচ্ছেন। অভিযোগ, ২০১৭ সালে উদ্বোধন হওয়া ওই প্রকল্পের পানীয় জলের আওতায় ২০২০ সালেও শহরের অর্ধেক বাসিন্দা আসেননি। বিশেষ করে নবদ্বীপের দক্ষিণ দিকের বিরাট অংশ জুড়ে এখনও পাইপ লাইনের বসানোর কাজ শুরু হয়নি। জল দূর অস্ত। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ২০ এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশের। শহরের দক্ষিণ অঞ্চলের ঝাঁপান তলা, তেঘরি পাড়া, কালীতলা রোড, স্টেশন রোড, মিত্র পাড়া ঘাট রোড, ষষ্ঠীতলা বাই লেন বা কলাবাগানের মতো জনবহুল এলাকায় এখনও পৌঁছয়নি জলপ্রকল্পের পাইপ লাইন।
তা নিয়ে কথা বলতে ক্ষোভ চেপে রাখলেন না মিত্রপাড়া ঘাট রোডের বাসিন্দা শচীন কোলে বা অপূর্ব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের কথায়, “শুনেছিলাম শহরের সকলের কাছে পৌঁছবে ওই জল। কিন্তু এখনও তো পাইপ লাইনই বসল না। কবে যে জলপ্রকল্পের জল পাব জানি না। দেখতে দেখতে আরও একটা গরম কাল চলে এল।”
গরমকালে পানীয় জল নিয়ে সমস্যা এই শহরের অনেক দিনের। গরম এখনও সে ভাবে না পড়লেও নবদ্বীপের উত্তর থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানীয় জল নিয়ে দুর্ভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে।
যদিও নবদ্বীপ পুরসভার জল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর মিহিরকান্তি পালের দাবি, জলপ্রকল্প চালু হওয়ার পর নবদ্বীপের পানীয় জলের ছবি আমূল বদলেছে। এমনিতে গঙ্গার তীরবর্তী নবদ্বীপে জলের সমস্যা তুলনায় কম। মাটির সামান্য নীচেই জলস্তর মেলে। পুরসভাও ডজনখানেক পাম্পের সাহায্যে সরাসরি জল তুলে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহ করে। শহরের কিছু মানুষ ব্যক্তিগত কুয়ো বা নলকূপের জল ব্যবহার করলেও, একটি বড় অংশের মানুষ দৈনন্দিন ব্যবহার এবং পানীয় হিসাবে নির্ভর করেন পুরসভার সরবরাহ করা ওই জলের উপরে। তিনি বলেন “এখন দু’ভাবে মানুষ পানীয় জল পাচ্ছেন। জলপ্রকল্পের মাধ্যমে নতুন নতুন এলাকায় জল পৌঁছচ্ছে। সেই সঙ্গে আগেকার ওভারহেড ট্যাঙ্ক থেকে জল সরবরাহও জারি আছে।”
শহর ঘুরে জানা গেল, নবদ্বীপের পূর্বদিকের ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০,১২ কিংবা দক্ষিণ দিকের ১৮, ১৯, ২০, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডগুলিতে জলের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। পূর্বদিকে গঙ্গার পাড় বরাবর রানির চড়া, রানির ঘাট, বৈষ্ণবপাড়, মণিপুর রোড অথবা শহরের দক্ষিণাঞ্চলের ঢাকানগর কলোনি, বাঁশবাগান, গৌরাঙ্গ কলোনি, তেঘড়িপাড়া, মিত্রপাড়া ঘাট রোডের মতো অঞ্চলে জলের সমস্যায় নাকাল মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, গরম যত বাড়ে তত কল দিয়ে সরু সুতোর মতো জল পড়ে। তাই পুরসভা তিন বার জল দিলেও তাতে প্রয়োজন পূরণ হয় না। জল নিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য জলপ্রকল্প রূপায়িত হয়েছিল শহরে। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটল কই!