—ফাইল চিত্র
এক দিকে ফুলে ওঠা নদীর জল উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়া, অন্য দিকে ভাঙনের ভ্রুকুটি। জোড়া দুর্বিপাকে বিপর্যস্ত নদিয়া বিভিন্ন অঞ্চল। নতুন করে ভাঙনে আতঙ্কিত নবদ্বীপের গঙ্গার পূর্বপাড়ের নিদয়া গ্রাম। গত এক সপ্তাহের লাগাতার বর্ষণে নবদ্বীপে গঙ্গার জলস্তর চার দিনের মধ্যে দু’মিটারের বেশি বেড়ে বিপদসীমা ছাড়িয়ে বইছে। ভাঙন শুরু হয়েছে মায়াপুর বামুনপুকুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের নিদয়া অঞ্চলে।
বৃহস্পতিবার থেকে গঙ্গার জলস্তর আর না বাড়লেও শুরু হয় ভাঙন। বুধবার রাত থেকেই পূর্বপাড়ের নিদয়া, ইদ্রাকপুর সংলগ্ন এলাকায় ফের ভাঙছে নদীর পাড়। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে চলে গিয়েছে বোল্ডার বাঁধানো বেশ কয়েক মিটার নদীপাড়, কংক্রিটের ধাপ-সহ স্নানের ঘাট। নদী থেকে কমবেশি পঞ্চাশ ফুট দূরে মানুষের বসতি। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়। আতঙ্ক ছড়িয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে।
সোমবার রাতের পরে ফের ভাঙন ধরেছে শান্তিপুরের বেলগড়িয়া ২ পঞ্চায়েতের বিহারিয়া মঠপাড়াতেও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে এলাকার বেশ কিছু জায়গায় ভাঙন শুরু হয়। একটি ইটভাটার চিমনি তলিয়ে যায়। দু’দিন আগেই সেখানে ভাঙনে একটি মন্দির তলিয়ে গিয়েছে।
ইদ্রাকপুরের কাছে নদীর পাড়ে মাহিষ্যপাড়ায় কমবেশি ষাট ঘর মানুষের বাস। প্রবীণ শিবশঙ্কর বিশ্বাস বলেন, “অনেক দিন পরে আবার সেই পুরনো দিনের মতো পাক খাচ্ছে নদীর জল। লক্ষণ ভাল নয়। চোখের সামনে তলিয়ে গেল সিঁড়ি বাঁধানো ঘাট। যে কোনও মুহূর্তে নদী ছোবল দিতে পারে আমাদের বসতি অঞ্চলে।”
কালীগঞ্জ পঞ্চায়েতের ঘাসুড়িডাঙা এলাকায় বাসিন্দারাও আতঙ্কিত। যদিও ওই এলাকায় আগের চেয়ে বাঁধ অনেক উঁচু ও চওড়া হয়েছে। সেচ দফতর সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টের নাগাদ স্বরূপগঞ্জে গঙ্গার জলস্তর ছিল ৮.৭৫ মিটার। আতঙ্কে রয়েছে নাকাশিপাড়ার কয়েকটি পঞ্চায়েতও। সেখানে নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত ও মাঝেরগ্রাম পঞ্চায়েতের নিচু এলাকায় ভাগরথীর জল ঢুকেছে। ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, ওই এলাকায় নজর রাখা হচ্ছে।
ইদ্রাকপুরের বাসিন্দা, নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা নবদ্বীপ ব্লক তৃণমূল সভাপতি তাপস ঘোষ জানান, নিদয়া অঞ্চলে ভাঙনের শুরু ১৯৮৮ সাল নাগাদ। সেই সময়ে এক রাতে নদীর বাঁক সোজা হয়ে অর্ধেক নিদয়া গ্রাম গিলে নিয়েছিল। একদা চারটি বুথের লোকসংখ্যা এখন কমে দুটো বুথে ঠকেছে। পরে ভাঙনের গতি কমলেও একেবারে বন্ধ হয়নি। তিনি বলেন, “কয়েক মাস আগে সেচ দফতর বোল্ডার দিয়ে গঙ্গার পাড় বাঁধানোর কাজ শেষ করেছে। কিন্তু তার মাস চারেকের মধ্যেই ভাঙন শুরু হওয়ায় আমরা সকলেই ভীত।” নবদ্বীপের বিডিও বরুণাশিস সরকার বলেন, “ভাঙনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সব দফতরে জানানো হয়েছে। জলস্তর একটু নামলে কাজ শুরু হবে।” একই ভাবে সারা বছর কমবেশি ভাঙন লেগেই থাকে কালীগঞ্জের নদীবাঁধে। এ বার ভাগীরথী ফুলে ওঠার পরেই বহু জায়গায় ফেরিঘাট বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কালীগঞ্জ ব্লকের গোবরা পঞ্চায়েতের ছেড়াখালি স্লুইস গেটের ফাটল দিয়ে গ্রামে জল ঢোকার কারণেও আতঙ্ক ছড়ায়। তবে ব্লক অফিসে খবর যাওয়ার পরে ওই ফাটল মেরামত করে দেওয়া হয়েছে।